কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হয়রানির শিকার হলে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী কথাও রেখেছে তারা।
তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত (বিকেল তিনটা) ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষার্থীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা ৫ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছেন তারা। তাছাড়া আর্থিক এবং আইনি সহায়তার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
যে ১৭ জন শিক্ষার্থীকে থানা থেকে থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে তারা হলেন- দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তার আহমেদ, রুকু খাতুন; শিল্পকলা বিভাগের ইমরান সাদমান, ইশরাক তৈমুর, ইমরান মিয়া; বাংলা বিভাগের মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ; কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের আবিদ হাসান, আরবি বিভাগের আবিদ হাসান রাফি; ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের নাজমুল হাসান শান্ত, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের মাসুম বিল্লাহ, ব্যাংকিং বিভাগের খাইরুল আজিম, ব্যবসায় প্রশাসন ইনিস্টিউটের (আইবিএ) রুবায়েত ফেরদৌস রনিন, ওএসএল বিভাগের রাশেদ খান আবিদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাদমান আব্দুল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মোস্তাক তাহমিদ, মার্কেটিং বিভাগের আরমান খান এবং ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ তামিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, কোনো নিরাপদ শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। উপাচার্য, প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টররা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করছেন। এ ছাড়া দুজন সহকারী প্রক্টরকে বিশেষভাবে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, ছাত্রদের জন্য ড. মোহাম্মদ হাসান ফারুক এবং ছাত্রীদের জন্য ড. ফারজানা আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন বলে একাধিক শিক্ষার্থী এবং বিভাগের চেয়ারম্যানরা নিশ্চিত করেছেন। আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবায়ের মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীকে যখনই তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি তখনই প্রক্টর মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। উনারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করায় আমাদের শিক্ষার্থীকে আমরা দ্রুত ফিরে পেয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। যখনই খবর পাচ্ছি তখনই সাথে সাথে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। মাননীয় উপাচার্য নিজেও বিভিন্ন থানায় এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। হাসপাতালে গিয়েছেন, আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া যারা কোর্টে চলে গেছে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ১৭ জনকে ছাড়িয়ে আনার পাশাপাশি আটকে থাকা এবং হয়রানির শিকার হওয়াদের নিরাপদ করার চেষ্টা করছি আমরা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এটি আমাদের ধারাবাহিক প্রসেস। আমরা আমাদের কথা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি এবং করব। আমার কোনো শিক্ষার্থীকে যাতে হয়রানি করা না হয় সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি। প্রক্টর মহোদয়সহ পুরো টিম শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে।
এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নানা সংবাদ গণমাধ্যমে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে তাকে প্রক্টর অফিসকে অবহিত করার নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে।