থামছে না বাল্যবিয়ে-শিশুশ্রম, ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

থামছে না বাল্যবিয়ে-শিশুশ্রম, ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি |

শ্যামনগরে বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম। শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের কারণে উপজেলার উপকূলীয় বিদ্যালয়গুলো থেকে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোতেই অনেকে পারিবারিকভাবে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। 

শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার ৪৬টি বিদ্যালয়, ৩৬টি মাদ্রাসা ও ৩টি কারিগরি (ভোকেশনাল) বিদ্যালয়ের মোট ৫ হাজার ৬৫৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩ হাজার ২৯৩ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ওই ব্যাচের কমপক্ষে ২ হাজার ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও শিশুশ্রম। মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে মূলত দায়ী বাল্যবিয়ে। বিয়ে হওয়ার পরে ছাত্রীদের পক্ষে পড়াশোনা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

শ্যামনগরে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটি এ বছর উপজেলায় ৩টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে প্রশাসনের সহায়তায়। ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি (বিএলসি) উপজেলা কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, অনেক সময় অভিভাবকরা দূরে কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দেন। ফলে সব বিয়ে রোধ করা সম্ভব হয় না। উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়। তবে উপজেলা প্রশাসনের অজান্তে অনেক বাল্যবিয়ে হচ্ছে।

উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের সাপখালী গ্রামের এক দরিদ্র অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক আত্মীয়ের কথা শুনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া মেয়েকে বিয়ে দিই। মাত্র চার মাসের মাথায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তার পড়াশোনাও আর হয়নি।

সদর ইউনিয়নের (শ্যামনগর পৌরসভা) মাহমুদপুর গ্রামের জোবেদা সোহারাব মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে। পড়াশোনাও আর হয়নি। তার পিতা বলেন, ভালো সম্বন্ধ পেয়েছি তাই আর দেরি না করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। কৈখালী ইউনিয়নের সাপখালী গ্রামের মোস্তফা গাজী বলেন, তার ছেলেকে পারিবারিক অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যের কারণে বেশি পড়াশোনা করাতে পারেননি। সপ্তম শ্রেণির পর তাকে ইটভাটায় পাঠিয়ে দেন কাজে। এ বছরও ইটভাটা মালিকপক্ষের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন তাকে কাজে পাঠানোর জন্য। শিশুশ্রমের কথা বলায় তিনি বলেন, ওসব আমরা বুঝি না। কাজ করতে হবে, কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না। অভাব অনটনের সংসারে একার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব না, তাই ছেলেকে কাজে লাগিয়েছি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেশি। বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসন থেকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করাও হচ্ছে। দারিদ্র্যের কারণে পারিবারিকভাবে শিশুরা শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছে।

জোবেদা সোহরাব মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, তার বিদ্যালয়ের ৯৭ জন শিক্ষার্থী ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার আগেই ৯ জন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। পাঁচজন ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়েছে। জানতে পেরেছি দারিদ্র্যের কারণে অভিভাবকরা তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে ও স্থানীয় বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগদান করিয়েছেন।

কৈখালী শামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার বিদ্যালয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৮৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। এবার ৫৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাকি ৩৩ জন ঝরে পড়েছে। এদের অধিকাংশেরই বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমে জড়িয়ে গেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখার্জী বলেন, তার বিদ্যালয়েও বাল্যবিয়ের কারণে কয়েক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তবে বাল্যবিয়ে শিকার হয়েও বেশ কয়েকজন ছাত্রী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বাল্যবিয়ে আগের তুলনায় কমেছে দাবি করে বলেন, বাল্যবিয়ের হার আগের তুলনায় কমলেও শিশু শ্রমের হার বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে প্রতি বছর আমাদের এ উপকূলীয় এলাকা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন ইটভাটাসহ অন্য পেশায় কাজে চলে যাচ্ছে। ছয় মাস ইটভাটায় কাজ শেষ করে তারা আর পড়াশোনায় যোগ দিচ্ছে না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারাত বলেন, শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসন, শিক্ষক এনজিওসহ সমাজে অনেক সচেতন মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন। স্কুলগুলোতে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। এরপরও দারিদ্র্য ও পরিবারের অসচেতনতার কারণে রোধ করা যাচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় বাল্যবিয়ে অনেক কমেছে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032379627227783