চিকিৎসক তৈরিতে মানের দিক থেকে কোনো ছাড় না দিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসক ও শিক্ষক তৈরির কারখানা। তাই সবসময় ভালো শিক্ষক তৈরির জন্য কাজ করতে হবে।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর সোবহানবাগে একটি স্থানীয় হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, ‘আমাদের সবসময় ভালো শিক্ষক তৈরির জন্য কাজ করতে হবে। দক্ষ চিকিৎসক তৈরিতে আমরা কোনো আপস করবো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে চার হাজার ৮০৭ জন রেসিডেন্ট চিকিৎসক আছে। এর মধ্যে বিদেশি ১০০ রেসিডেন্ট আছে। তাদের ডিগ্রিটা যেন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেয়া হয়। আমরা তাদের পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবো না। চিকিৎসক তৈরিতে কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না।’
অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক আরো বলেন, ‘আমি চেষ্টা করবো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশ্বে একটি অনুকরণীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়তে। এজন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর প্রধানতম একটি কারণ হৃদরোগ, যা দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এই হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের ব্যাপকমাত্রায় সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কিছু উপায় আছে, যার মাধ্যমে আমরা হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারি, এরপরও যদি কারও হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়, দ্রুততম সময়ে তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।’
অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে হৃদরোগের চিকিৎসা এখনও বলা যায় রাজধানীকেন্দ্রিক। আমরা চাচ্ছি প্রান্তিক পর্যায়ে হৃদরোগের চিকিৎসা পৌঁছে দিতে। আমরা চাইবো হৃদরোগের চিকিৎসা যেন বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, সারা দেশ থেকে রোগীদের যেন ঢাকায় আসতে না হয়।’
অধ্যাপক ডা. জামান আরো বলেন, ‘দেশে ১০০ জন ব্যক্তির যদি হার্ট অ্যাটাক হয়, তাদের মধ্যে মাত্র ৬ জন রোগী চিকিৎসার আওতায় আসছে। এর অন্যতম বড় কারণ রোগীরা সময়মতো হাসপাতালে আসতে পারছে না। আবার অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে। এজন্য আমরা চাচ্ছি প্রান্তিক পর্যায়ে যেন অন্তত একটা ইসিজি করে রোগী বুঝতে পারে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি-না। আর ডাক্তার যারা রয়েছেন, তারাও যেন তাদের অফিস টাইমের বাইরেও রোগীর প্রয়োজনে হাসপাতালে ছুটে এসে রোগীর জীবন রক্ষা করেন।’
বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহম্মেদ ও অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক প্রমুখসহ দেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।