গত চার দশকের বেশি সময় ভয়াবহ দাবানলের সঙ্গে লড়াই করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দারা। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং বিধ্বংসী দাবানলের স্বাক্ষী হলেন রাজ্যের বাসিন্দারা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্রমে আরও উত্তপ্ত ও শুষ্ক হয়ে উঠা ক্যালিফোর্নিয়ায় পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায় তিন হাজার ৮৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা। সময়মতো বৃষ্টি আসায় ভয়াবহতা থেকে বেঁচে যায় মানুষ। পরের বছর এক হাজার ২১৪ বর্গকিলোমিটার পুড়ে যায়। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মৃদু দাবানলে পুড়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার একর অঞ্চল। দুই দশকে এই অঙ্গরাজ্যে কমপক্ষে ২০টি বড় দাবানলের ঘটনা ঘটে। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ক্যাম্প ফায়ার নামের দাবানলে ৮৫ জন মারা যান। ওই দাবানলে সেখানকার প্যারাডাইস নামের শহরটি পুরো ভস্মীভূত হয়ে যায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার বনাঞ্চল ও দাবানল প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মরা গাছ ও শুকনো লতা-গুল্মের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। তারা শুষ্ক ও মরা গাছ সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি লতা-গুল্ম, যার মাধ্যমে আগুন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, বিলীন করতে নতুন পন্থা ব্যবহার করছে। দাবানলের হাত থেকে বাঁচতে ছাগলের শরণাপন্ন হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার নেভাডা সিটি কর্তৃপক্ষ। কারণ ছাগল শুকনো পাতা, ঘাস, গুল্ম, ঝোপঝাড় ও ছোট গাছ খেয়ে বনের আগুন ছড়ানো ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রাণী শরীরের ওজনের প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত খেতে পারে। ঠিক এ বিষয়টিই কাজে লাগিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নেভাডা সিটির ভাইস মেয়র সেনাম বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে তারা ‘গোট ফান্ড মি’ নামের একটি তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছেন। মূল শহরের মধ্যেই সাড়ে ৪০০ একর বনাঞ্চল রয়েছে। কাজেই বড়সড় কোনো দাবানলে তাদের শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। এ কারণেই ছাগলের শরণাপন্ন হয়েছেন তারা।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে অভিনব এক উপায় বের করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ। তারা এ দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাগল মোতায়েন করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পরিবেশবিষয়ক অধ্যাপক কারেন লঞ্চবো জানিয়েছেন,ক্ষুধার্ত একটি ছাগলের পাল দিনে এক একর জমির ঝোপঝাড় খেয়ে ফেলতে পারে। এতে আগুন ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানল দেখা দিচ্ছে। আর এ দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ছাগলের পাল। ছাগল অতি সহজে পাহাড় বাইতে পারে। এতে করে পাহাড় ঘেরা এই শহরে দাবানল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।`
ছাগল পালনকারী মাইকেল চোই বিবিসিকে জানিয়েছেন বলেন, লতা-গুল্ম খেতে খেতে ছাগলের পাল অতি সহজে পাহাড়ের উপরে উঠে যেতে পারে। এভাবে পাহাড়ের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
মাইকেল জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিস, স্কুল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে তিনি ছাগল ভাড়া দিয়ে থাকেন। এটি তার পারিবারিক ব্যবসা। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইকেলের সাত শতাধিক ছাগল রয়েছে। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা আরও ছাগল আনছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাগলগুলো ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়ার জন্য উপযোগী। কারণ এগুলো গরম সহ্য করতে পারে এবং এদের বেশি পানি দরকার হয় না।