দাবি আদায়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে ঢাবি ছাত্রলীগ - দৈনিকশিক্ষা

দাবি আদায়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে ঢাবি ছাত্রলীগ

ঢাবি প্রতিনিধি |

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে কখনো নীলক্ষেত অবরোধ কর্মসূচি, কখনো জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি, কখনো বা গণ আত্মহত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন আন্দোলনরতরা। এর মধ্যে অনেক দাবি পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অনেক দাবি এখনো মেনে নেয়নি বলে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এবার অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সংকটের কথা শুনেছে ঢাবি ছাত্রলীগ। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা। 

মঙ্গলবার ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সংকট নিরসনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে অংশ নেন সাত কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংকটসহ দৃশ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ২১ দফার মতো প্রস্তাব রাখা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা নিরসনে শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাবো। তাদের দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে ছাত্রলীগ। প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াবো। অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে সেল গঠন এবং ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অধিভুক্তবিষয়ক সম্পাদক সংযোজন করা হবে।

ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আজকে যেভাবে ঢাবি ছাত্রলীগ আপনাদের কথা শুনেছে, ভবিষ্যতেও আপনাদের কথা শোনা হবে। আপনাদের দাবি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবে ছাত্রলীগ। ঢাবি ছাত্রলীগ সব সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে। 

ঢাবি রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ফোন নম্বর নিয়ে যান। সেখানে সেবা নিতে গিয়ে কোনো হয়রানির স্বীকার হলে আমাদের জানাবেন। আমরা একটি বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি। যেই স্বপ্ন দেখেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর সেটির জন্য সংগ্রাম করে চলছে তাঁর কন্যা।

সভায় সাত কলেজের বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে কথা বলার সময় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন বলেন, আমরা যখন প্রিন্সিপাল স্যারে কাছে যাই, তখন তিনি বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) যাও। আর ঢাবিতে গেলে বলে কলেজে যাও। আমরা এসব সমস্যার সমাধান চাই।

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহমুদ অপু বলেন, সাত কলেজের অভিভাবক কে বা কারা? সব সময়ই আমরা হয়রানির সম্মুখীন হই। আমাদের ঠিকমতো ক্লাস হয় না। শিক্ষক সংকট, ফলও দেরিতে প্রকাশ করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাত ধরে সব সমস্যা নিরসন হবে।

ফল দেরিতে প্রকাশ করা প্রসঙ্গে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, আমাদের ফল ৬ মাস, ৭ মাস, ৯ মাস পর দেয়া হয়। যার ফলে আমরা জানতেও পারি না কোন বিষয়ে খারাপ করলাম। আমি ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী ঢাবির অনেক বিভাগেই পরীক্ষা শেষ। সেখানে আমদের পরীক্ষার রুটিন, ফরম ফিলআপ কিছুই হয়নি।

দাবি আদায়ে বিগত আন্দোলন প্রসঙ্গে সানজিদা মেবিন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিগত তিন মাসে আমরা নীলক্ষেতে আমরা অনেক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা তো আন্দোলনে নামতে চাই না, আমরা পড়ার টেবিলে থাকতে চাই। নয় মাস পর আমরা যখন জানতে পারি নন প্রোমোটেড। তখন জানতে পারি পূর্বের বর্ষে কিভাবে সবগুলো বিষয়ে পরীক্ষা দেবো? আমাদের দাবি সর্বোচ্চ তিন বিষয়ে মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন। আমরা আশা করবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা আমাদের দাবি আদায়ে পাশে থাকবেন। 

মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজে বেশি নেয়া হয় এমন অভিযোগ তুলে বদ্দরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিয়া লামিয়া বলেন, আমাদের এখানে দেখা যায় মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে লাগে ২ হাজার ২০০ টাকা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেয় ৩০০ টাকা। সেখানে তো তাদের ১ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে গেলো না। এটা কি বৈষম্য নয়? মানোন্নয়নে যে ফি, তা ঢাবির শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন লাগে তা অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি সহনীয় পর্যায়ে আনা হোক।

পরীক্ষা পেছানো প্রসঙ্গে মোছা. সাদিয়া নামে আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্য স্বীকার। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার বাকি মাত্র ১৫ দিন, এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে এতোগুলো বিষয়ের ভালো করে প্রস্তুতি নেবে। অনুগ্রহ করে আমাদের পরীক্ষা যেন পেছানে হয়, ছাত্রলীগের ভাইদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সাত কলেজে সেমিস্টার পদ্ধতি চান এমন দাবি জানিয়ে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, আমাদের যে এই সমস্যা এটা দীর্ঘ দিনের। যেদিন থেকে অধিভুক্ত করা হয়, সেই দিম থেকেই এই সমস্যা। এসবের মূলে রয়েছে তদারকির অভাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত সাত কলেজগুলোতে ঠিক মতে তদারকি করছে না। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সেমিস্টার সিস্টেমে আনা হয়, তাহলে সেই বৈষম্য অনেকাংশেই কমে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যেন তাদের তদারকি বৃদ্ধি করে। যদি তদারকি বৃদ্ধি করা হয়, এই বৈষম্যগুলো আরো থাকবে না।

সাত কলেজের দাবি পূরণের বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক তসলিম চৌধুরী বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে আমাদের কেউ ডাকেনি। তবে সাত কলেজের বড় ভাইদের উচিত ছিলো আমদের সঙ্গে বসার। আমরা অনেক কয়েকবার গিয়েছি। কিন্তু তাদের কাছে বহুবার গিয়ে কোনো সাড়া পাই পাইনি।

এসময় তিনি একাডেমিক সংকট নিরসনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবি গুলো হলো, স্থগিত পরীক্ষাসহ সব বর্ষের পরীক্ষা নির্বাচনের আগে নিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সর্বোচ্চ তিন মাস (৯০ দিনের মধ্যে) ফল দিতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী নন-প্রমোটেড হবে তাদের ফেল করা কোর্সগুলো পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে নিতে হবে যেনো শিক্ষার্থীদের এক বছর নষ্ট না হয়। পরীক্ষার খাতায় ওএমআর সিস্টেম চালু করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ডিপার্টমেন্টে সেমিস্টার সিষ্টেম চালু আছে, সাত কলেজ ও সে সকল ডিপার্টমেন্টে সেমিস্টার সিষ্টেম চালু করতে হবে। সাত কলেজের সার্টিফিকেটে Affiliated শব্দটা বাকি ফ্রন্ট-এর মতো লিখতে হবে। Affiliated শব্দটা বোল্ড করে আলাদা ফ্রন্টে লিখায় সাত কলজের সার্টিফিকেট দৃষ্টিকটু ও গুরুত্বহীন হচ্ছে। পর্দার ডিজিটাল সমাবর্তন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছে। সমাবর্তন সবার সঙ্গে স্ব-শরীরে নিতে হবে নয়তো পর্ব-ভিত্তিক করে সাত কলেজের আলাদা সমাবর্তন দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক চালু করতে হবে এবং আলাদা আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে। 

সাত কলেজে পিএইচডি-ডক্টরেট টিচার নিয়োগ দিতে হবে এবং ঢাবির নিয়ম-নীতির জন্য সাত কলেজের টিচারদের ট্রেনিং দিতে হবে। টিচার সংকট দূর করতে হবে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ল্যাব সুবিধা বাড়াতে হবে। আবাসন সমস্যার সমাধান করতে হবে। ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে ঢাবি কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিটি কলেজে ঢাবি কর্তৃক হেল্প ডেক্স থাকতে হবে। সাত কলেজের জন্য আলাদা প্রশাসনিক ভবন দিতে হবে এবং তা কোনো কলেজ কেন্দ্রিক হওয়া যাবে না। বর্তমানে রেজিস্টার ভবনে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। স্ব-স্ব কলেজে পরিক্ষার কেন্দ্র দিতে হবে।

যে শিক্ষক ক্লাস করেনি, তিনিই যেনো পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন করেন। যা পড়ানো হয় তার সাথে যেন পরীক্ষার প্রশ্নের সামঞ্জস্যতা থাকে। ঢাবি কর্তৃল সাত কলেজের ক্লাস মনিটরিং করতে হবে। পরপর দুই বর্ষের পরীক্ষা না নেওয়া, ১ম বর্ষের সাথে ৩য় বর্ষ এবং ২য় বর্ষের সাথে চতুর্থ বর্ষ, এভাবে পরীক্ষা দিতে হবে। পুনঃপরীক্ষা ও পুনঃমূল্যায়নের ফলাফলে সমস্যা, কোনো পরিবর্তন হয় না। খাতা পুনঃ মূল্যায়ন ভালোভাবে করতে হবে।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ঢাবির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037519931793213