দৈনিক শিক্ষাডটকম, ময়মনসিংহ : যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে দুই শিক্ষকের শাস্তি দাবির আন্দোলনে উত্তাল ত্রিশালের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। দিনভর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ, কুশপুতুল দাহ করা, প্রক্টর কার্যালয়, বিভিন্ন অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকে তালা দেন। সেইসঙ্গে পরিবহনও বন্ধ করে দেন তারা। এ সময় সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দিনভর এসব ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে পরিস্থিতির খারাপ হওয়ায় ওই দুই শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। তবে এ ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলেও জানা যায়।
জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নেয়ায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি তাকেও বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ূন কবীর এসব তথ্য গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া ব্যবস্থাকে প্রহসন উল্লেখ করে ওই দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তোলেন।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬-এর ১১(১০) ধারায় অধিকারপ্রাপ্ত ক্ষমতাবলে উপাচার্য কর্তৃক পরবর্তী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই দুই শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়।
এর আগে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। গত সোমবার (১১ মার্চ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি তদন্ত সাপেক্ষে মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য।
পরে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চারঘণ্টা আলোচনা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া মেনে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের আশ্বাসে আস্থা রেখে পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন। এরপর আজ ফের আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রথম হেনস্তার বিষয়টি সামনে আসে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অংক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা ও প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় নম্বর কমিয়ে দেয়া এবং থিসিস রিপোর্ট তৈরিতে হয়রানি করার অভিযোগ করেনে এক শিক্ষার্থী।
ছাত্রীদের শাড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছবি চাওয়া, রিকশা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ক্যাম্পাসের বাইরে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নিমন্ত্রণ, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিয়োর লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ আসে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তার কাণ্ডে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন বিভাগীয় প্রধান।