আজ শনিবার দিন ও রাত সমান। এই দিনে কাল্পনিক রেখা মহাকাশীয় বিষুব রেখায় (সেলেশিয়াল ইকুয়েটর) পৌঁছে। এ কারণে আজ দুপুরে সূর্য সরাসরি মাথার উপর থেকে কিরণ দিতে দেখা যাবে। এ কারণে আজ দিনে ১২ ঘণ্টা সূর্যের আলো থাকবে এবং রাতে ঘটবে এর বিপরীতটা। অর্থাৎ রাতে ১২ ঘণ্টা অন্ধকার থাকবে। এটা উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধের সব দেশেই ঘটবে। এ দিনে সূর্য মহাকাশীয় বিষুব রেখা অতিক্রম করে উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে।
২৩ সেপ্টেম্বর শরৎকালের এ সময়ে এ ঘটনাটা ঘটে আসছে। আজকের পর থেকে উত্তর গোলার্ধে দিবাভাগ কমবে ও রাত দীর্ঘ হতে থাকবে। অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে কাল রোববার অর্থাৎ ২৪ আগস্ট থেকে দিবাভাগে সূর্যালোক কম পেতে থাকবে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে ঘটবে এর বিপরীতটা। এমন চলতে থাকবে আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেদিন উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে সর্বত্র দিবাভাগে সবচেয়ে কম পরিমাণ সূর্যালোক পাবে, এ কারণে প্রচণ্ড শীত থাকবে। মানে সেদিন উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন হবে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে হবে সবচেয়ে ছোট রাত। বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের দেশ বলে আগামী ২৩ ডিসেম্বর হবে সবচেয়ে ছোট দিন। সেপ্টেম্বর মাসের এ ঘটনাকে সেপ্টেম্বর ইকুইনক্স (দিন-রাত সমান) বা অটাম ইকুইনক্সও বলে।
অটাম ইকুইনক্সে দিন-রাত সমান হয় বলে আবহাওয়ায় এর কিছু প্রভাব দেখা যায়। দিনটা গরম থাকলেও তেমন গরম অনুভূত হয় না। বৃষ্টিপাতের ধরনেও পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশে গত শুক্রবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়ে গেছে, এটা হয়তো এ কারণে ঘটে থাকতে পারে।
তবে জ্যোতির্বিদরা বলছেন, এ দিনে দিন-রাত সমান হয় বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে একেবারেই দিন ১২ ও রাত ১২ ঘণ্টা হয় না। দিন ও রাতের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে ৮ মিনিটের একটি পার্থক্য থাকে। এই ৮ মিনিট ১২ ঘণ্টার তুলনায় খুবই নগণ্য সময় বলে জ্যোতির্বিদরা এ দিনে দিন-রাত সমান হিসেবে ধরে নেন।
বাংলাদেশ পূর্ব দিকে বলে দিনটা আগে শুরু হবে; কিন্তু আমেরিকা পশ্চিমে বলে সেখানে দিনটা আমাদের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পরে শুরু হবে। কিন্তু ঘটনাটা আজ শনিবারের মধ্যেই ঘটবে। আমেরিকান নিউজ সিবিএস বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে দিন-রাত সমান হওয়ার ঘটনাটি সাধারণত ২২ অথবা ২৩ সেপ্টেম্বর ঘটে থাকে। এ বছর ২৩ সেপ্টেম্বর এ ঘটনা ঘটবে। এটি ২১ সেপ্টেম্বরও ঘটে থাকে কখনো কখনো। চলতি একবিংশ শতাব্দীতে আগামী ২০৯২ ও ২০৯৬ সালে সেপ্টেম্বর ইকুইনক্স বা অটাম ইকুইনক্স বা দিন-রাত সমান হওয়ার ঘটনা ঘটবে ২১ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ১৯৩১ সালে সেপ্টেম্বর ইকুইনক্স ঘটেছিল ২৪ সেপ্টেম্বর।
তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালে ঘটে সেপ্টেম্বর ইকুইনক্সের বিপরীত ঘটনা। ২১ ডিসেম্বরের শীতে উত্তর গোলার্ধে সূর্য অনেক দূরে চলে যায় এবং অনেক শীত অনুভূত হয়। একই কারণে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মে সূর্য কাছে থেকে আলো দেয় এবং তখন অনেক গরম থাকে। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীতটা ঘটে।
অটাম ইকুইনক্সে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসে। প্রথমত, প্রকৃতি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হতে থাকে। শীতের আগমনী বার্তা শোনা যায় ২৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে। অন্য দিকে গাছের পাতা সবুজ হতে থাকে অথবা ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অন্য রঙ ধারণ করে। ফ্লেভোনয়েডস, কেরোটেনয়েডস, এনথোসায়ানিনসের কারণে পাতায় পরিবর্তন আসে। কিন্তু শীত শুরু হলে পাতার পুরো ক্লোরোফিলস কমে গিয়ে পাতা প্রাণবন্ত অ্যাম্বার, লাল ও হলুদ রঙ ধারণ করে।