ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিখোঁজের চার দিন পর ১৩ ও ১৬ বছর বয়সী দুই মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মাদরাসার দুই শিক্ষককে আসামি করে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেছেন।
অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক হলেন সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের পয়াগ গ্রামের হাফেজ জুনায়েদ খন্দকার (২৮) ও তাঁর ভাই হাফেজ রায়হান খন্দকার (২৬)।
মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী উপজেলার একটি মাদরাসার হিফজ বিভাগের ছাত্রী ছিল। তারা মাদরাসাতেই থাকত। গত মঙ্গলবার সকালে নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামে তাদের লাশ পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে লাশ দুটির ময়নাতদন্তের পর ওই দিন বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুজনই ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ময়নাতদন্তসম্পন্নকারী চিকিৎসক অনিক দেব।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ছুটি শেষে ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় এক ছাত্রীকে তার বোন ও অপর ছাত্রীকে তার মা মাদরাসায় দিয়ে আসেন। পরদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ আবুল খায়ের দুই শিক্ষার্থীর নিখোঁজের বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোনে জানান। পরিবারের সদস্যরা মাদরাসায় এলে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাতে বললে কূটকৌশল অবলম্বন করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাবে বলে পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। তাঁরা এক পর্যায়ে মাদরাসা থেকে চলে যান। এরপর মঙ্গলবার সকালে সাদেকপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে কাদাপানিতে দুই শিক্ষার্থীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। সদর থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। সুরতহাল প্রতিবেদনে দুই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানসহ স্পর্শকাতর স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
এজাহারে বলা হয়, মামলার আসামি জুনায়েদ খন্দকার ও তাঁর ভাই রায়হান খন্দকার ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে ২৭ আগস্ট ভোর চারটার মধ্যে যেকোনো সময় মাদরাসায় কিংবা অন্য কোনো অজ্ঞাত স্থানে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। পরে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে মাদরাসাশিক্ষক দুই ভাই তাঁদের মা–বাবা, স্ত্রী ও এক আত্মীয়ের সহায়তায় দুজনকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। পরে তাদের লাশ সাদেকপুর ইউনিয়নের জামে মসজিদের পূর্ব দিকে জমির ওপর কাদাপানিতে ফেলে রাখেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন আজ রাত আটটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, মাদরাসার দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীর বাবা মামলা করেছেন। এর আগে গতকাল মধ্যরাতে পয়াগ গ্রাম থেকে ওই দুজনকে আটক করা হয়। তাঁদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডের শুনানি এখনো হয়নি। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতার চেষ্টা চলছে।