জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা শামীম গণপিটুনিতে আহত হয়ে মারা গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জেল নামের এক যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি ‘অমানবিক’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন শিল্পীরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা জানিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেতরে ঘটে যাওয়া ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় ঘৃণা প্রকাশ করে নতুন প্রজন্মের অভিনেতা শামীম হাসান সরকার ফেসবুকে লেখেন, ‘কারও কোনো ক্ষতি না করেও রাতে ঘুম আসে না। চিন্তা হয় কত কিছু নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে, ভবিষ্যত নিয়ে, দেশকে নিয়ে! আপনারা খুন করে রাতে ঘুমান কীভাবে? ভাত খান কীভাবে? কষ্ট হয় না?’
এ অভিনেতা আরও লেখেন, ‘মানসিক ভারসাম্যটা তোফাজ্জলেরই ছিল, আপনাদের ছিল না? ভিডিওগুলো যতবার সামনে আসছে, বুকটা ফাঁকাই লাগছে। কীভাবে সম্ভব? তবে বিচার হতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব এ খুনীদের বিচার করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষার্থে হলেও করতেই হবে।’
নির্মাতা আশফাক নিপুন লেখেন, ‘আমি শুধু তাদের মায়েদের কথা ভাবি। এই যে গতকাল তোফাজ্জল নামের মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ এক যুবককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র পিটিয়ে মেরে ফেলল, আমি ভাবি তোফাজ্জলের মা সেটা দেখতে পেলে কি করতেন? জানলাম উনি মারা গেছেন আগেই। কিন্তু এমনও তো হতে পারে তোফাজ্জলের কাছ থেকে ৩ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন উনি, ছেলেকে বাঁচাতে পারছিলেন না দেখে চূড়ান্ত অসহায় বোধ করছিলেন? হয়তো ছেলেকে ভাত খেতে দেখে আশান্বিত হচ্ছিলেন যে ছেলের কিছু হবে না আর, এই যাত্রা বেঁচে যাবে? হয়তো এরপরও নির্যাতনের মাত্রা দেখে আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করছিলেন ছেলেটার যেন মৃত্যু হয়, ছেলেটা যেন আর কষ্টের ভেতর দিয়ে না যায়?’
অভিনেত্রী সুষমা সরকার লেখেন, ‘হায় মানবিকতা।’ গায়ক পারভেজ লেখেন, ‘যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ? দিনশেষে অত্যাচারী আর অত্যাচারিত এই দুই দলেই বিভক্ত থেকে গেলাম আমরা?’গায়ক এফএ সুমন লেখেন, ‘হায় রে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে। আল্লাহ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করো। বর্তমান সরকারের প্রতি সঠিক তদন্ত করে এর দ্রুত বিচারের আহবান জানাচ্ছি। তোফাজ্জল ভাইকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমিন।’’
মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ফেসবুকে লেখেন, ‘তুমি যদি স্বাধীনতার মর্ম না বোঝো, তাহলে তুমি স্বাধীনতার স্বাদ হারাবে। আব্বার কাছে শুনতাম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকের মধ্যেই জোশ চলে আসছিল, সে-ই সব। সে নিজেই অভিযোগকারী, নিজেই বিচারক, নিজেই এক্সিকিউশনার। হাতে অস্ত্র আছে, অথবা আছে মবের শক্তি। সুতরাং মারো, মেরে ফেলো। ফল কী হয়েছিল আমরা জানি। ’
এ নির্মাতা আরও লেখেন, ‘আচ্ছা স্বাধীনতার পর না হয় একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল, এমন কি যখন আওয়ামী লীগের কঠিন আঁটুনির ভেতর আটকা ছিল দেশ, তখনও কি আমরা বাড্ডার এক মাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারি নাই? রংপুরে নামাজের পর এক মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে মেরে পুড়িয়ে দেই নাই? আমি আশা করছিলাম, এই নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে সাথে নতুন দায়িত্বের ব্যাপারটা আমার উপলব্ধি করবো। আমাদের দিলে রহম জিনিসটা আসবে। একশজন মববাজি করতে আসলে দুজন হলেও রুখে দাঁড়াবে! ঢাকা আর জাহাঙ্গীরনগরে কি এরকম চারজন ছিল না রুখে দাঁড়ানোর? এটা লজ্জার, বেদনার। ’