আদালতের নির্দেশে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্ত গাড়িচালক মহসীন আলীর পাঁচতলা বাড়ি জব্দ করার পর বেরিয়ে আসছে নানান তথ্য। কলেজর সভাপতি পদে বসেও তিনি করেছেন নিয়োগ-বাণিজ্য। তার বিরুদ্ধে নিয়োগে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগম পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী। দুর্নীতির দায়ে তাঁরা দুজন এখন বরখাস্ত।
মনিরামপুরের মাতৃভাষা মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চারতলা একটি ভবন করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহসীন। অভিযোগ রয়েছে, কলেজের অধ্যক্ষ হাসানুল কবিরকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের ডিও লেটারে তিনি সভাপতির পদ বাগিয়েছেন। এই পদে বসার পর কলেজের জন্য ভবন করে দেওয়া তো দূরের কথা, একটি ইটও দেননি; বরং উল্টো শুরু করেছেন নিয়োগ-বাণিজ্য।
কলেজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি মাতৃভাষা মহাবিদ্যালয়ে ল্যাব সহকারী পদে বিল্লাল হোসেন ও আশিকুর রহমান নামের দুজন নিয়োগ পেয়েছেন। এই নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত কোনো দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে মহসীন আলীর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মহসীন আলী মোবাইল রেখে বাইরে গেছেন। এই বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
অধ্যক্ষ হাসানুল কবির বলেন, ‘ভবন দেওয়ার কথা সত্য নয়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের সাপোর্ট নিয়ে মহসীন সভাপতি হয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে তাঁর বাড়ি জব্দ হয়েছে কি না জানা নেই।’
ওই দুই কর্মচারীর নিয়োগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা ল্যাব সহকারী পদে দুজনকে নিয়োগ দিয়েছি। তাঁরা প্রতিষ্ঠানে ২৫ শতক জমি কিনে দিয়েছেন। রেজিস্ট্রিসহ জমির দাম ১৭ লাখ টাকা পড়েছে।’
কলেজে কাউকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ নেওয়ার বিধান রয়েছে কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা ওই দুজনের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিইনি। তাঁরা ডোনেট করেছেন।’
এদিকে ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ পেতে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চাকরিচ্যুত গাড়িচালক মহসীন আলী এলাকায় পরিচিত মুখ নন। তিনি সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডেও যুক্ত থাকেন না। কোনো নির্বাচন ছাড়াই ‘অধ্যক্ষ ও উপর মহলকে ম্যানেজ করে’ তিনি কলেজের সভাপতির পদ বাগিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগে একজন চাকরিচ্যুত কর্মচারী কীভাবে কলেজের সভাপতি হন, সেটা নিয়ে চলছে নানান আলোচনা।
এদিকে গত বুধবার মহসীন আলীর শাশুড়ির নামে যশোরে কেনা জমিসহ পাঁচতলা বাড়ি ‘রাশিদা মহল’ জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খেদাপাড়া বাজারে একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে মহসীন আলীর। এর পাশে একটি গাভির খামার গড়েছিলেন। তবে দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর সেখানে মাদরাসা গড়ে তোলেন মহসীন।