দ্বৈত শাসন: এমপিও বঞ্চিত অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

দ্বৈত শাসন: এমপিও বঞ্চিত অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: দ্বৈত শাসনের কবলে ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারি বেসরকারি কলেজগুলো। এসব কলেজ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের (এনইউ) বিধিমালার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগ, পরিচালনা ও এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা’ বাধ্যতামূলক অনুসরণ করতে হয়। রোববার (১০ মার্চ) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এনইউ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) পাচ্ছেন না অনেক শিক্ষক। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজে ‘অধ্যক্ষ’ নিয়োগে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিনিধি অন্তুর্ভুক্ত করেছে। অথচ একই স্তরের মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে ডিসি প্রতিনিধি রাখা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমপিও দিতে না পারায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সাল থেকে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রেখেছে বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে রংপুরের শ্যামপুর ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান শামীম হুদা। এই সাত বছরেও তিনি এমপিওভুক্তি হতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমপিওভুক্তির আশায় শিক্ষকতায় এসেছিলাম। এখন হতাশ...মানবেতর জীবন-যাপন করছি।’

শামীম হুদা জানান, দীর্ঘ ৩২ বছরেও এই স্তরের শিক্ষকদের জন্য সেভাবে জনবলকাঠামো তৈরি হয়নি। এর ফলে শুধু অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের’ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে নানা পরিপত্র, সার্কুলার ও নীতিমালা জারি করে। প্রায় দেখা যায়, এগুলির সঙ্গে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নীতিমালার সমন্বয় থাকে না। এর ফলে শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান প্রবীণ ওই শিক্ষক নেতা।

তিনি গত ১১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে বলা হয়েছে-বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের কমিটিতে ডিসি প্রতিনিধি থাকবেন। পাঁচ সদস্যের এই নিয়োগ কমিটিতে শিক্ষা বোর্ড ও মাউশির একজন করে প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে কমপক্ষে তিনজন প্রার্থী থাকতে হবে।

শিক্ষক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের ৪০১টি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এমপিও অর্থাৎ বেতনভাতা না পেয়ে ‘মানবেতর’ জীবন যাপন করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার একশ’র মতো শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) জনবলকাঠামো অনুযায়ী অনার্স-মাস্টার্স স্তরে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধানে এই সুযোগ রয়েছে। এই ‘সাংঘর্ষিক’ বিধিবিধানের কারণে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা এমপিও থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

১৯৯২ সালে দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এর পর ১৯৯৩-৯৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ পর্যায়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী ইন্টারমিডিয়েট পাঠদানকারী একজন এবং ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রতি বিষয়ের জন্য একজন শিক্ষক (মোট ২ জন) এমপিওভুক্ত হয়।

শিক্ষকদের জনবলকাঠা মতো রাখা হয়নি। এর ফলে ৩২ বছরেও এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না। যদিও অনার্স-মাস্টার্স সমপর্যায়ের মাদ্রাসা পর্যায়ের ফাজিল (স্নাতক বা ডিগ্রি সমমান) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স) পাঠদানকারী শিক্ষকদের এমপিও সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পাস কোর্সে পাঠদানকারী শিক্ষকরা সরকার থেকে পুরো বেতন-ভাতা (এমপিও) পাচ্ছেন। আর শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পাঠদানকারী শিক্ষকরা বেতন পাবেন না এটি হতে পারে না। এটি সামাজিক অনাচার-অবিচার।’ তিনি অবিলম্বে সরকারের ‘স্টাপিং পেটার্ন’ পরিবর্তন করে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি করেছেন।

সাংঘর্ষিক বিধিমালা

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এনইউ’র বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স খুলতে প্রতিটি বিভাগে সাত জন শিক্ষক এবং মাস্টার্স কোর্সে অতিরিক্ত আরও পাঁচ জন শিক্ষক, অর্থাৎ মোট ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন হয়।

অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় অনার্স কলেজে প্রতি বিষয়ে শূন্য পদে মাত্র তিন জন শিক্ষক নিয়োগের বিধান আছে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

এনইউ’র বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক জন সহকারী অধ্যাপক উক্ত অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবেন।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে তিন বছরের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ/ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ/এমপিওতে তিন বছরের সহকারী অধ্যাপক পদে এবং মোট ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার বিধান রয়েছে। এই ধরনের সাংঘর্ষিক বিধিবিধানের কারণে নিয়োগ ‘জটিলতা’র নিরসন ঘটছে না।

এনইউ’র নীতিমালা অনুযায়ী, এই বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষক নিয়োগে একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে গভর্নিং বডির মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে।

অথচ ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। একই বছর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়।

কিন্তু অনার্স-মাস্টার্স কলেজে অতিরিক্ত শিক্ষক কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই বিষয়ে কোনকিছু বলা নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালায়।

দুইজন শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন, ডিগ্রি পাস কোর্স চালুর অনুমতি নিতে গিয়ে তিনজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি কলেজগুলো। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তৃতীয় জন (তৃতীয় শিক্ষক নামে পরিচিত) দীর্ঘদিন ধরে এমপিও পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিও পান।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040380954742432