জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ড না মেনে যখন ১৩ বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন প্রতি ছয়জনে একজনের বেশি। যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশশন (ইউজিসি)। তবে শিক্ষক সংকটের দায় তাদের নয়, উল্টো ইউজিসির দিকেই অভিযোগের তীর ছুড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্র্তৃপক্ষ।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ হাজার পাঁচজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ২১২ জন। যার মধ্যে অনুপস্থিত ৩৫ জন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষার মান ধরে রাখতে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক প্রয়োজন। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত শিক্ষক রয়েছেন প্রতি ৩৪ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন। অনুপস্থিত শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শঙ্কায় খোদ ইউজিসি। এমন পরিস্থিতি ভয়ংকর ও অনুচিত বিবেচনা করছে কমিশন।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘শিক্ষককদের শিক্ষা ছুটি প্রদানের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড রেশিও (আদর্শ অনুপাত) মানা উচিত। যদিওবা তা মানা হচ্ছে না। এর কারণে শিক্ষার মানোয়ন্ননে সমস্যা হচ্ছে। এই সংকট সমাধানে আমরা কাজ করছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তরিক হলেই কেবল এই সংকট সমাধান সম্ভব।’
তবে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দাবি করেছেন উল্টোটা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নিয়ম ও নির্দেশনা মানতে প্রস্তুত। তবে আমাদের সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন, যেটির পদ ছাড় করছে না ইউজিসি। সংকট সমাধানে ইউজিসি আন্তরিক না হলে এই সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়।’
ইউজিসির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক বা খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়ে চালানো হচ্ছে শিক্ষার কার্যক্রম। যদিও খণ্ডকালীন নিয়োগ নিরুৎসাহিত করেছে ইউজিসি। খণ্ডকালীন নিয়োগ থেকে সরে এসে প্রয়োজনে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে জোর দিয়েছে ইউজিসি। তবে সেই নিয়ম না মানার তালিকায় রয়েছে ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। যেখানে ৪৫৪ জনকে খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একই তালিকায় ৫৬ জন নিয়ে ৬ নম্বরে রয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে নিজেদের প্রতিবেদনের তথ্যের বিপরীত চিত্রও উঠে এসেছে ইউজিসির বিরুদ্ধেই। কমিশন বলছে, শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত যেমন ঠিক রাখতে হবে, তেমনি শিক্ষকদের ছুটি প্রদানে সচেতন থেকে শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। কিন্তু তাদের বক্তব্যের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দাবি, বারবার পদ ছাড় করার জন্য আবেদন করার পরও ইউজিসি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা মানছে না। তাই এই সংকট দেখা দিচ্ছে। আমরা বারবারই সমাধানের পথে হাঁটছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, অস্থায়ী নিয়োগ থেকে সরে এসে প্রয়োজনে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আমরা দ্রুতই সংকট সমাধানে মার্চ মাসে উপাচার্যদের সঙ্গে সভা করব।’
তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘শিক্ষার এই সংকট আমাদের নয়। এটি ইউজিসির। ইউজিসি না চাইলে এই সংকট সমাধান সম্ভব নয়। আমরাও খণ্ডকালীন কিংবা অস্থায়ী নিয়োগ দিতে চাই না। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে শিক্ষকের প্রয়োজন, সেটি না দিলে আমাদের কী করার আছে? আমি নিজে বারবার জানিয়েও ফল পাইনি।