রুম্মান তূর্য, দৈনিকশিক্ষাডটকম : দেশের ৩৫ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট দূর করতে শিগগিরই নতুন শিক্ষক নিয়োগের কর্মযজ্ঞ শুরু করছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রার্থী বাছাই ও নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব থাকা এনটিআরসিএর কর্তারা বলছেন, চলতি জানুয়ারি মাস থেকে এ নিয়োগের জন্য শূন্য পদে তথ্য দিতে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন ও ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য হালনাগাদ শুরু হতে পারে। এ নিয়ে কারিগরি সহায়তা দেয়া প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সঙ্গে কর্মকর্তারা কয়েকদফা আলোচনা করেছেন। ই-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালানোর অনলাইন সফটওয়্যারের ডেমো তৈরি করছে টেলিটক। যা আসছে সপ্তাহে এনটিআরসিএর সামনে উপস্থাপন করার কথা আছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, চলতি মাসেই ই-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা শিগগিরই নতুন নিয়োগের কাজ শুরু করতে চাই। নতুন নিয়োগের জন্য নতুন করে শূন্য পদের তথ্য নিতে হবে। আর বেশ কিছু নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শূন্য পদের তথ্য দিতে ই-রেজিস্ট্রশন করতে হবে। আর অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তথ্য হালনাগাদ করবে। এরপর শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই শেষে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে শেষাংশে নতুন শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে বলে আশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তবে, বাস্তবতা হলো ই-রেজিস্ট্রেশন থেকে শিক্ষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারির জন্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়। সে বছরের ২৬ জুন থেকে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। গণবিজ্ঞপ্তি জারি হয় ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর। প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ, নির্বাচন, সনদ যাচাই, পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ শেষে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ২৭ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক সংকট কাটাতে ও নির্ভুলভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাইয়ে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বর্তমানে বছরে একবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন ও চাহিদা এন্ট্রি করা হলেও সারা বছরের জন্য এ প্রক্রিয়া খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় বছরের একটি সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ই-রেজিস্ট্রেশন ও তথ্য হালনাগাদের সুযোগ পাবেন। আর পরে শুধু নিয়োগ সুপারিশ চলার সময়টুকু ছাড়া বছরের অন্যান্য শূন্য পদের তথ্য দিতে পারবেন। শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে। যেগুলো সংগ্রহ করে নিয়োগ সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। চতুর্থ ধাপে শিক্ষক নিয়োগের জন্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ৬৮ হাজার পদ শূন্য। এমপিওপ্রাপ্য এসব এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩২ হাজার পদে প্রার্থী নির্বাচন করা যায়। যেখান থেকে মাত্র ২৭ হাজার নতুন শিক্ষককে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষাংশে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। যাদের কেউ যোগ দিয়েছেন, কেউ কেউ দেননি। নতুন শিক্ষকরা সবাই যোগদান করলেও ৪১ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্যই থাকছে। এসবের সঙ্গে যোগ হবে ২০২২ এর অক্টোবর থেকে ২০২৪ এর জানুয়ারি পর্যন্ত অবসরজনিত কারণে শূন্য হওয়া শিক্ষক পদ। এ হিসাবে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধলক্ষাধিক পদ এখনও শূন্য। যা ষাট হাজার বলেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক সংকট নিয়েই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছিলো দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এসব প্রতিষ্ঠানে ২৭ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলেও সংকট পিছু ছাড়েনি। এ বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে শিক্ষক সংকট নিয়েই।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।