নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ফলোআপ প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হলেও এতে আগ্রহ নেই বেশিরভাগ শ্রেণি শিক্ষকের। শিক্ষকদের অনেকের নেই জুম অ্যাপ ব্যবহার উপযোগী স্মার্ট ফোন। আবার ফলোআপ প্রশিক্ষণ সেশনের ইন্টারনেট খরচ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে না। নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে ইন্টারনেট ডাটাপ্যাক কিনে শিক্ষকদের অনেকেই ফলোআপ প্রশিক্ষণ সেশনে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। অনলাইনে ফলোআপ প্রশিক্ষণ সেশনে অংশ নিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে নওগাঁর শিক্ষকদের মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি-শিক্ষকদের সাপ্তাহিক অনলাইন ফলোআপ সেশন পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম প্রকল্পের স্কিম পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি শিক্ষকদের সপ্তাহিক অনলাইন ফলোআপ সেশনের আয়োজন করতে বলা হয়। গত ১৫ মের মধ্যে সব উপজেলায় সাপ্তাহিক অনলাইন ফলোআপের সেশন শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো চিঠিতে।
অনলাইন ফলোআপ সেশন পরিচালনার নির্দেশায় বলা হয়, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন শিক্ষাক্রম সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্যে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের জুম অ্যাপের মাধ্যমে সাপ্তাহিক অনলাইন ফলোআপ সেশনে অংশ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাপ্তাহিক এ অনলাইন ফলোআপ সেশন তত্ত্বাবধান করবেন। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নিয়মিতভাবে প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার একঘণ্টা জুম মিটিং করবেন। এ জুম মিটিংয়ে বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রমকে ফলপ্রসু করা, শিখন শিখানো কৌশল বাস্তবায়ন ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বাধা অতিক্রমের উপায়, সমস্যা ও সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় করার নির্দেশনাও সেখানে দেয়া হয়েছে।
জুম অ্যাপের মাধ্যমে মাস্টার ট্রেইনাররা গত ১৫ মে খেবে ফলোআপ প্রশিক্ষণ শুরু করলেও সেই প্রশিক্ষণ সেশনে যুক্ত হচ্ছেন খুব কম সংখ্যক শিক্ষক। নওগাঁর কয়েকটি উপজেলার মাস্টার ট্রেইনারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোনো ট্রেইনারের সেশনে যুক্ত হয়েছেন একজন আবার কোনো ট্রেইনারের সেশনে যুক্ত হয়েছেন দুইজন শিক্ষক।
এদিকে মুক্তপাঠে মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না অনেক শিক্ষক। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা তাদের সহকর্মী বা কোনো কম্পিউটার দোকান থেকে এই কোর্সের সনদ তৈরি করে নিচ্ছেন।
শ্রেণি শিক্ষকরা বলছেন, প্রায় অর্ধেক শিক্ষকের কাছে স্মার্টফোন নেই, যে শিক্ষকদের কাছে স্মার্টফোন আছে তাদের মধ্যে অনেকে এখনো ঠিকমতো অনলাইন কার্যক্রম বোঝেন না। আবার ইন্টারনেট খরচের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষকরা নিজেদের পকেটের টাকায় ডাটাপ্যাক কিনে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। মফস্বল এলাকায় ইন্টারনেটের কাঙ্ক্ষিত গতিও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এতে ফলোআপ প্রশিক্ষণ সেশন সফল করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ প্রশিক্ষণ নিতে প্রয়োজন একটি স্মার্টফোন ও ডাটাপ্যাক। আমাদের মধ্যে অনেকের কাছে এখনো স্মার্টফোন নেই। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বরাদ্দও নেই। সরকার থেকে আমরা যে বেতন-ভাতা পাই সেটা দিয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে ঠিকমতো আমাদের সংসার চালাতে পারি না। আমরা কিভাবে স্মার্টফোন ও মোবাইল ডাটাপ্যাক কিনে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নেবো। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্মার্টফোন ও ডাটাপ্যাক কেনার টাকা বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলার মাস্টার ট্রেইনার তাপস কুমার হাজরাসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাস্টার ট্রেইনার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের গ্রাম এলাকায় এখনো সব শিক্ষকের কাছে স্মার্টফোন নেই। যেসব শিক্ষকের কাছে স্মার্টফোন আছে সেই সব শিক্ষকদের মধ্যে সবাই অনলাইনে পারদর্শী নয়। এছাড়াও মোবাইল ডাটাপ্যাক কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় হয়তোবা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে মাস্টার ট্রেইনারদের মতে, যদি শিক্ষকরা ঠিকমতো অনলাইন প্রশিক্ষণ সেশনে যুক্ত হয় তাহলে নতুন এ কারিকুলাম বাস্তবায়ন সহজ হবে।
নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সরকারি নির্দেশনা মতো প্রধান শিক্ষকদের জানানো হয়েছে। তবে পারিপার্শ্বিক দিকগুলোও তাদের দেখতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।