নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মাত্র পাঁচ দিন - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মাত্র পাঁচ দিন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষকদের মাত্র পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা শুরু করতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। ‘শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ’ নামের ওই কর্মসূচিতে সারাদেশের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আগামী ২৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ৫ দিনের এই প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমে কী কী থাকছে, কী কী করতে হবে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি কিরকম হবে- এই তিনটি বিষয় বুঝিয়ে দেয়া হবে। প্রশিক্ষণের জন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এর আগে সারাদেশের প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষককে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘মাস্টার ট্রেইনার’ করা হয়েছে। তারাই এখন জেলায় জেলায় শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষকদের না বোঝার কারণে ১০ বছর আগে শুরু হওয়া সৃজনশীল পদ্ধতির পড়াশোনা খুব একটা সুফল বয়ে আনেনি। মুখস্থবিদ্যা থেকে বের হওয়ার জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি আবিষ্কার করা হলেও সেটি নোট-গাইডনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়ে। একই কায়দায় নামকাওয়াস্তে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি কতটা কার্যকর করা যাবে- এ নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠেছে। তাদের মতে, নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে ‘হাতে-কলমে’ শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। নতুন এই শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হবে না, কোচিংয়ে যেতে হবে না। এমনকী গৃহশিক্ষকেরও দরকার পড়বে না। এতে বেশির ভাগ শিক্ষকের কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ‘উপরি ইনকাম’ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকরা তেমন একটা উচ্ছ¡াস প্রকাশ করছেন না।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ  বলেন, নিঃসন্দেহে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি অনেক কঠিন ও জটিল। বক্তৃতানির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এর ফলে শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন কোনো কিছু শুরুর সময় সংকট হবে, ধাক্কা খেতে হবে। ধাক্কা খেতে খেতেই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সব করবে। স্যাররা শুধু পাশে থেকে দেখবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূল্যায়ন ও পড়াশোনার ধরনে বড় পরিবর্তন এনে নতুন শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও  

পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন এই শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরোপুরি চালু হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে চালুর মধ্য দিয়ে পুরোপুরিভাবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে। প্রথাগত পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, যদি নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে আগামী পাঁচ বছর পর থেকে একটু পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যাবে। আর ১০ বছর পর বড় পরিবর্তন দেখা যাবে। নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা দাবি করছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রশ্নের ধরন বদলে যাবে। এই বদলে যাওয়ার বিষয়টিই প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের জানিয়ে দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা হবে না। এই পর্যায়ে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে প্রথাগত পরীক্ষার ভিত্তিতে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে। নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ে পুরো মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নে বেশি জোর দেয়া হবে। এই স্তরে ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। বাকি ৩০ শতাংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ও বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা হয়। সৃজনশীল পদ্ধতিতে একটি প্রশ্নকে চার ভাগে ভাগ করে উত্তর জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে বিদ্যমান কাঠামোয় প্রশ্নপত্র হবে না বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

কী আছে নতুন বইয়ে : নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি বিষয়ে ১০টি বই থাকবে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা (যার যার ধর্ম অনুযায়ী) এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়। আর নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য ৮টি বিষয় ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে সব বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা বই পাবে না। কিছু বই ‘শিক্ষক গাইডের’ আলোকে পড়ানো হবে। এত দিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আনন্দ পাঠ (বাংলা দ্রুতপঠন), বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত এবং চারুপাঠের মাধ্যমে মূলত বাংলা বিষয়টি পড়ানো হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলায় একটি বই থাকবে। বইয়ের নাম ‘বাংলা’। শিক্ষার্থীরা যাতে প্রমিত বাংলা ভাষায় ভালোভাবে যোগাযোগ করতে শেখে, সেটি মাথায় রেখে বইটি লেখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যাতে ভাষাদক্ষতা বাড়াতে পারে, সেজন্য কিছু কৌশল এবং কাজও যুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে এত দিন কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা পড়ানো হতো। এখন ‘জীবন ও জীবিকা’ নামে নতুন বইয়ে অনেক কিছুই হাতে-কলমে শেখানোর বিষয়বস্তু রয়েছে। যেমন এই বইয়ের ‘কাজের মাঝে আনন্দ’ অংশে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের বিছানা পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন বাস্তব বিষয় শেখানোর কথা রয়েছে। এগুলোর জন্য বিভিন্ন অনুশীলনীর মাধ্যমে শেখানোর কথা রয়েছে।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034480094909668