দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি। এ শিক্ষাক্রমের সুফল পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠাভ্যাস উন্নয়নে দেশের ১৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ লাখ নির্বাচিত বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
শিক্ষাক্রম নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাচ্চা কতো নম্বর পেলো, জিপিএ-৫ পেলো কী-না, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলো কী-না, অন্যের বাচ্চার চেয়ে আমার বাচ্চা বেশি নম্বর পেলো কী-না এই বিষয়গুলো নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত ছিলেন বাবা-মায়েরা। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরিতে বর্তমান শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। এই বিষয়গুলোর জন্য বাবা-মায়ের কিছু সংশয় তো কাজ করছেই। সেগুলোকে এই গোষ্ঠী (মিথ্যাচারকারী) কাজে লাগাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি অভিভাবকদের বলবো- একটু দেখুন, আপনার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার বাচ্চা যদি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে থাকে তাহলে তার আচার-আচরণ পরিবর্তন হয়েছে কী-না। সে কত নম্বর পেয়েছে সেদিকে নজর না দিয়ে সে শিখলো কী-না, সেদিকে নজর দিন। একটু ধৈর্য্য ধরুন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যা শিক্ষাক্রমের অংশ নয়, আমাদের প্রশিক্ষণেরও অংশ নয়, এমন ভিডিওসহ বিভিন্ন বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। অতীতের কোনো প্রশিক্ষণে (যা মাধ্যমিকের নয়) প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেরা নিজেরা বিনোদনের অংশ হিসেবে নিজেরা নিজেরা যে প্রাকটিস করেছে সেই রকম কিছু ভিডিও সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে এইগুলো প্রশিক্ষণ। এমনকি নতুন ভিডিও তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ানক রকম অপপ্রচার চলছে এবং সেটি হচ্ছে-ব্যক্তি স্বার্থ বা গোষ্ঠী স্বার্থহানী হওয়ার ভয়ে। কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। তারসঙ্গে এখন তো নির্বাচনের সময়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকেন, তাদের উসকানি যুক্ত হয়ে গেছে। অতিডান, অতিবামের উসকানিও যুক্ত হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের আট শতাধিক বিশেষজ্ঞ নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সবাইকে কোনো না কোনোভাবে এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে রেখে জনগণের মতামত, পরামর্শ নেয়া হয়েছে, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিছু পরামর্শসহ তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পাইলটিং করেছি। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে। সব বইগুলোকে আমরা বলছি পরীক্ষামূলক সংস্করণ, আমরা মনে করিনি আর পরিশীলন, পরিমার্জন দরকার নেই, একবারে চূড়ান্ত। আমরা মনে করি- এ বইগুলো আরো পরিশীলন, পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে। সে জন্য সবার পরামর্শ গ্রহণ করছি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদসহ অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য দেন।