নতুন শিক্ষাক্রম সংশোধনের দাবিতে রাজধানীর কয়েকটি স্কুলের কিছু অভিভাবক রাজপথে নেমেছেন। গত কয়েকমাস ধরে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে শিক্ষাক্রম বাতিল দাবি করে প্রচারণা চালানোর পর শুক্রবার তারা মানববন্ধন করেন। তারা ইতিমধ্যে চালু হওয়া শিক্ষাক্রম সংশোধন করে পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রচলিত নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবিও করেন। একইসঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যবহারিকের ব্যয়ভার বহন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব দাবি করেন তারা।
অভিভাবকরা ‘পরীক্ষা ফিরিয়ে আনতে হবে’, ‘গুগল থেকে নয় বই থেকে পড়তে চাই’, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যবহারিক কাজের অতিরিক্ত ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
মারজানা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার এক মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছেলে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু তারা নতুন শিক্ষাক্রমে করে করে যা শিখছে সেটি সাত বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য ঠিক আছে। কারণ, ওই সময় শিশুর মস্তিষ্ক গঠিত হয়।
তিনি আরো বলেন, পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি দিয়ে আমাদের বাচ্চাদের মূল্যায়ন চাই না। শিক্ষকরাই এটা বোঝেন না বলেও দাবি তার। নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল বা পরিমার্জনসহ বেশ কয়েকদফা দাবি জানিয়েছেন মানববন্ধনে। ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখানে ‘শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম’ নাম দিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
অভিভাবকদের দাবিগুলো হলো, নতুন কারিকুলাম সংস্কার করতে হবে, নব্বইয়ের দশকের আগের মতো পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে, মেধা যাচাই হবে নম্বরের ভিত্তিতে, সব ব্যবহারিক বিষয় স্কুলে সম্পন্ন করতে হবে, যেকোনো পরিবর্তন পরিমার্জন করতে হলে ওই কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি রাখতে হবে, অযৌক্তিকভাবে পরীক্ষা ফি ও বেতন বাড়ানো যাবে না এবং পরবর্তী ক্লাসে পুনর্ভর্তি ফি এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে।
শিক্ষাক্রম সংস্কাদের দাবি জানানো অভিভাবকরা বলছেন, নতুন কারিকুলাম আমাদের সন্তানদের শিক্ষার ভিত নষ্ট করে দিচ্ছে। যেখানে শিক্ষকরা নিজেরা ভালো করে বুঝতে পারে না, সেখানে শিক্ষার্থীদের কী পাঠদান করাবে তা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমে কারিকুলামের কাঠামো তৈরি করে তারপর কয়েকটি বিষয়ের ওপর চালু করা উচিৎ ছিলো।
তারা আরো বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতি ছাড়া মেধা মূল্যায়নে অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিলো। যেখানে পরীক্ষার জন্য বই পড়তে চাইতো না, সেখানে বাচ্চারা পরীক্ষাহীন লেখাপড়ায় বইয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। তারা এখন মোবাইল, ট্যাব এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। শিক্ষকরা ইন্টারনেট থেকে সব লিখে আনতে বলে। যেখানে সারা বিশ্ব ডিভাইস থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে আমরা উৎসাহিত করছি এগুলো ব্যবহার করার জন্য। ডিভাইস আসক্তি এমন একটি বিষয় যা ড্রাগসের থেকেও ভয়ংকর। নম্বরের ভিত্তিতে মেধা যাচাই আমাদের এ অঞ্চলের দেশগুলোতে দীর্ঘদিন প্রচলিত। সেখানে আমরা ত্রিভুজ, চতুর্ভূজ, বৃত্ত দিয়ে মেধা যাচাই করছি। আমরা নিশ্চই বোকা বা বধির নই যে আমাদের মূল্যায়নে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। পৃথিবীতে কোনো দেশের সুস্থ মানসিকতার কাউকে এই পদ্ধতি দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। নতুন শিক্ষাক্রম বিকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা। এমন দাবিও করেন তারা।
অভিভাবকরা বলেন, ব্যবহারিক নামের এক ধরনের যন্ত্রণা চালু করা হয়েছে আর প্রতিটি অভিভাবককে এই নরকে জ্বলতে হচ্ছে। বাসা থেকে রান্না করা, বিভিন্ন ধরসের উপকরণ যেমন গাছ লাগানো, টব বানানো, পতুল বানানোসহ আরো অনেক কিছু করে আনতে হয় বাচ্চাদের। এগুলো মূলত করতে হয় বাচ্চাদের মাদের। এ ধরনের ব্যবহারিক কী কোনো উপকারে আসবে। তাই সব ব্যবহারিক স্কুল থেকেই করতে হবে। যেকোনো নতুন কারিকুলাম হঠাৎ করে বাচ্চাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার আগে অবশ্যই সে সম্পর্কে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভালো করে জানাতে হবে। তা না হলে বাচ্চাদের বুঝানো কঠিন হয়ে যাবে। হঠাৎ করেই বিভিন্ন স্কুল বেতন বৃদ্ধি, পরীক্ষা ফি বৃদ্ধি, নতুন ক্লাসে ভর্তির ফি নেয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
চলতি বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অভিজ্ঞাতা ও দক্ষতা নির্ভর এ শিক্ষাক্রম এ বছরই প্রাথমিকের প্রথম এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে। আগামী বছর (২০২৪ শিক্ষাবর্ষে) থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এরপর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে তা চালু হবে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে। আর উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। শিক্ষার নীতিনির্ধারকরা বলছেন, শিশুর মেধা বিকাশে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রম প্রস্তু করা হয়েছে। পাইলটিংয়ের পর তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের শিখতে পাড়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দক্ষ করে গড়ে তুলবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।