নতুন শিক্ষাক্রম: সর্বাধিক যোগ্য প্রশিক্ষক চাই - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম: সর্বাধিক যোগ্য প্রশিক্ষক চাই

মো. রহমত উল্লাহ্ |

নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তরণে শিক্ষকদের পুনঃ পুনঃ প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যতীত নতুন পদ্ধতিতে পাঠদান ও মূল্যায়ন কোনো শিক্ষকের পক্ষেই সঠিকভাবে সম্ভব নয়। জানা গেছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষক বাছাই প্রক্রিয়ার শুরুতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানতে পারলাম সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, একাডেমিক সুপারভাইজারদের কাছে তারা প্রশিক্ষণ নেবেন না। কেনোনা, একাডেমিক সুপারভাইজাররা  শিক্ষক নন। তারা প্রকল্প থেকে এসেছেন। তাই সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের অধ্যাপকদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চান। আবার একাডেমিক সুপারভাইজাররা  বলছেন, তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ মাস্টার ট্রেইনার। অভিজ্ঞ মাস্টার ট্রেইনাররা প্রশিক্ষক হবেন এটাই স্বাভাবিক।

এই বিতর্ক চলমান থাকাকালেই চলমান জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। প্রথম ব্যাচে গত ৯ অক্টোবর থেকে গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৩০ জন একাডেমিক সুপারভাইজার ও ১৫৪ জন শিক্ষা কর্মকর্তা নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, যারা একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছেন তারা কারা? আর যারা একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকা থেকে বাদ দিতে বলছেন তারা কারা? আমাদের জানামতে, শিক্ষা প্রশাসনে অধিকাংশ সরকারি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষকই নিয়োজিত। সেখানে তো কোন বেসরকারি শিক্ষক নেই! তাহলে, সরকারি শিক্ষক পরিচালিত শিক্ষা প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন সরকারি শিক্ষকরাই! এমতাবস্থায় একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে কোন্ ক্রাইটেরিয়াতে প্রশিক্ষকদের বাছাই করা হলো তা কিন্তু আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। 

সারাদেশের শিক্ষকদের পুনঃ পুনঃ প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষক তৈরির কোনো লিখিত ও অনুমোদিত নীতিমালা আছে কিনা তা আমার জানা নেই। লিখিত ও প্রকাশিত নীতিমালা থেকে থাকলে এবং সে নীতিমালা অনুসারে একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা তা বাতিল বা সংশোধনের জন্য দাবি উত্থাপন করতেন। তেমন দাবি তাদের আবেদনপত্রে ও পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়নি। সুষ্ঠু নীতিমালা প্রকাশিত হলে নিশ্চয়ই বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ থাকতো না এবং থাকবে না। 

মোট শিক্ষকের প্রায় ৯৫ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষকের মধ্য থেকে কতোজন, মোট সরকারি শিক্ষকদের মধ্য থেকে কতোজন, মোট একাডেমিক সুপারভাইজারদের মধ্য থেকে কতোজন ও মোট শিক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কতোজনকে এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে অনুপাত বিশ্লেষণ করতে গেলে চলে আসবে আরো অনেক কথা, অনেক বিতর্ক। তাছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হবার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের সব অধ্যাপক সর্বাধিক যোগ্য, সরকারি স্কুল-কলেজের সব শিক্ষক অধিক যোগ্য, সব একাডেমিক সুপারভাইজার/ শিক্ষা কর্মকর্তা বেশি যোগ্য, আর সব বেসরকারি শিক্ষক অযোগ্য এমন বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও পক্ষপাত দুষ্ট। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম বা বেশি যোগ্য ও দক্ষ লোক বিদ্যমান। বিভিন্ন এনজিওতেও অনেক যোগ্য-দক্ষ প্রশিক্ষক আছেন। আসল কথা হচ্ছে, সবদিক বিবেচনা করে সর্বাধিক যোগ্য-দক্ষ প্রশিক্ষক বাছাইয়ের জন্য অবশ্যই সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও নিরপেক্ষভাবে তা অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ প্রশিক্ষক ব্যতীত উত্তম প্রশিক্ষণ অসম্ভব। শিক্ষকদের উত্তম প্রশিক্ষণ ব্যতীত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব।  

বিভিন্ন কারণে যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণের ও প্রদানের বেশি সুযোগ পেয়েছেন তারা সবাই বেশি যোগ্য-দক্ষ হয়েছেন এমনটি বলা যায় না সবার ক্ষেত্রে। 

একজন উত্তম প্রশিক্ষকের থাকা চাই কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান, পাঠদান পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগে উচ্চ দক্ষতা, স্পষ্ট উচ্চারণ ও জোরালো কণ্ঠস্বর, মুদ্রাদোষমুক্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, শুদ্ধভাবে বলায় ও লেখায় অভ্যস্ততা,  আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতা, সহজ বিশ্লেষণ ও সুন্দর উপস্থাপন ক্ষমতা, শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস/সক্ষমতা, সুষ্ঠু শ্রেণি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা, ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারে পটুতা, সহশিক্ষায় আগ্রহ ও পারদর্শীতা। সেই সাথে তাকে হতে হবে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ আধুনিক তথ্যসমৃদ্ধ, বিজ্ঞানমনস্ক, নিরপেক্ষ, ধৈর্যশীল, মিষ্টভাষী, উদ্যমী, উৎসাহী, নিরলস… ইত্যাদি আরও অনেক গুণের অধিকারী। সিমুলেশন ক্লাসের মাধ্যমে উল্লিখিত যোগ্যতা ও দক্ষতা মূল্যায়ন করা সম্ভব। সিমুলেশন ক্লাস রেকর্ড করে প্রয়োজনে যাচাই করে বাছাইকারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাচাই করে সিমুলেশন ক্লাসের মাধ্যমে দক্ষতা বিবেচনা করে উত্তম প্রশিক্ষক বাছাইয়ের পরেও বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের দ্বারা প্রশিক্ষকদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। অর্থাৎ প্রশিক্ষকরা কেমন প্রশিক্ষণ দেন তা প্রতিনিয়ত গঠনকালীন মূল্যায়নের আধুনিক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যেহেতু প্রশিক্ষণার্থীরা শিক্ষক, সেহেতু তারা দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা প্রয়োগ করে প্রশিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারবেন এবং করবেন বলে আশা করা যায়। এতে করে প্রশিক্ষকরা ক্রমাগত নিজের মান বৃদ্ধি করা ও সর্বোচ্চটা প্রদান করার ব্যাপারে সদা সক্রিয় থাকবেন এবং কোনো প্রশিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতা যে কোনো পর্যায়ে কাঙ্খিত মাত্রায় না থাকলে বা তুলনামূলকভাবে কম থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর স্থলে অধিক যোগ্য-দক্ষ লোক নিয়োজিত করা যাবে। 

যাদের সর্বাধিক যোগ্যতা, দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও সৎসাহস আছে তাঁরা নিশ্চয়ই আমার এই প্রস্তাব চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সুষ্ঠু নীতিমালা অনুসরণ করে প্রশিক্ষক হতে চাইবেন। এ প্রক্রিয়ায় যদি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষক, সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার নির্বিশেষে নিরপেক্ষভাবে সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষদের প্রশিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং নিয়োজিত রাখা হয় তো প্রশিক্ষণের মান তথা শিক্ষার মান বিতর্কহীনভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। 

লেখক : মো. রহমত উল্লাহ্, শিক্ষাগবেষক 

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029518604278564