দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সমমনা ১১টি দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করা নতুন এ জোটের নাম ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’। আজ বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ জোটের ঘোষণা দেয়া হয়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এ জোটের ঘোষণা দেন। এ সময় দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১১-দলীয় জোটের শরিকেরা হলেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার লুৎফর রহমান ও এস এম শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও মো. আকবর হোসেনের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ, গরিবে নেওয়াজ ও সৈয়দ মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ, আবদুর রকিব ও আবদুল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, এম এন শাওন সাদেকী ও দিলীপ কুমার দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, নুরুল আমিন ব্যাপারী ও শাহ আহমেদ বাদলের নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, নূরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও আবু সৈয়দের নেতৃত্বাধীন গণদল, আজহারুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা আকন্দের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী এবং সুকৃতি মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি।
নতুন জোটের ঘোষণার সময় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। এ সময় তিনি বলেন, ইতিমধ্যে গণ–আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত ১০ দফা এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জ্ঞাপন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে। ভোটারবিহীন একদলীয় আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভয়াবহ বেকারত্ব ও কর্মশূন্যতায় দেশের মানুষ দিশাহারা।
এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বর্তমান একদলীয় আওয়ামী সরকার তার একক কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রাখতে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মামলা, হামলা ও গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে এক বিভীষিকাময় সংস্কৃতি তৈরি করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সমমনা ১২টি দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
এক দশক আগে ২০১২ সালে ২০–দলীয় জোট গঠন করা হয়। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের গতি ও ব্যাপ্তি বাড়াতে ২০–দলীয় জোট অনানুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন এক অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে বলে দেয়া হয়, এখন থেকে কেউ যেন ২০–দলীয় জোটের নাম ব্যবহার না করে।
২০–দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর ভাগাভাগি হয়ে আলাদা জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে বিএনপির সায় আছে। এর কারণ, যেহেতু বিএনপি কৌশলগত কারণে ২০–দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আর কার্যকর রাখছে না, তাতে ছোট দলগুলো একা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সমমনা এতগুলো ছোট দলের সঙ্গে বিএনপির পক্ষে আলাদা বৈঠক করা বা যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে সমন্বয় করাও কঠিন হবে; বরং দলগুলো পৃথক জোটভুক্ত হলে তাদের সঙ্গে বিএনপির সমন্বয় করা সহজ হবে। অন্যদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি শরিক দলসহ বাম প্রগতিশীল ধারার মোট সাতটি দল নিয়ে ইতিমধ্যে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠন হয়েছে। এই গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সমন্বয়ের জন্যও লিয়াজোঁ (সমন্বয়) কমিটি হচ্ছে।