সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ডিগ্রি কলেজ, কারিগরি) একসঙ্গে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতারা।
বুধবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ দবিরুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মনিমুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ ইমরান বিন সোলায়মান, জহুরুল ইসলাম রাজু, এরশাদুল হক, অধ্যক্ষ বাকিবুল্লাহ, ফরহাদ হোসেন বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান সিরাজ, হাবিবুর রহমান বাবুল, বাবুল আক্তার, নাঈম হোসেন, সুপার তরিকুল ইসলাম, প্রভাষক নুরুল আমিন নওয়াব, খায়রুল ইসলাম, প্রভাষক শামসুন্নাহার, প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন খান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ দবিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরা যৌক্তিক আন্দোলন করে আসছি। আমরা মনে করি, এই যৌক্তিক আন্দোলনের ফসল হিসেবে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য একটি সুন্দর নীতিমালা উপহার দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে সাত হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। যা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ২০২১ সালে বলেছিলেন– ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি বছর এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া হবে।’ কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০২২ সালে কোনো আবেদন নেওয়া হয়নি। ২০২৩ চলে যাচ্ছে, যদিও আবেদন নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত তা নেওয়া হচ্ছে না। ২০২৩ সালে যদি আবেদন না নেওয়া হয় তাহলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে বিনা বেতনে কেউ চাকরি করতে পারে না।
দবিরুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে এমপিওভুক্তির পর অবশিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। এরপর গত ৩০ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি। তারপর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ৩০ আগস্ট এমপিও নীতিমালার শর্তগুলো শিথিল করে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিও’র দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর একই দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া হয়নি।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, এমপিওভুক্ত হতে না পারা নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘ ২০-২৫ বছর বা তারও বেশি সময় বেতনহীন অবস্থায় থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন ধ্বংসের দারপ্রান্তে। বিনা বেতনে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেকেই অবসর গ্রহণ করেছেন, আবার অনেকের চাকরির বয়স শেষের দিকে। আমরা মনে করি, সারা বিশ্বে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যা আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রত্যাশা করিনি।
দবিরুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে নন-এমপিও শিক্ষকদের অমানবিক কষ্টের কথা চিন্তা করে বিশেষ বিবেচনায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রী। তাই আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কাচে আমাদের আকুল আবেদন, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সীমাহীন কষ্টের কথা চিন্তা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক বিবেচনায় এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর সব শর্ত শিথিল করে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চলমান সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করে আপনাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন।
এ অবস্থায় বিশেষ বিবেচনায় এমপিও নীতিমালার সব শর্ত শিথিল করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে নন-এমপিও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে এমপিওভুক্তির আদেশ দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী পরিষদ।