নানামুখী সংকটে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো - দৈনিকশিক্ষা

নানামুখী সংকটে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১৮ শিক্ষকের পদ রয়েছে। তবে থাকার কথা ছিল ২৬ জন শিক্ষক। কিন্তু আছেন মাত্র ১২ জন। ১৮ পদের কথা ধরলেও ৬টি পদ খালি। নেই নিয়মিত প্রধান শিক্ষকও। সাময়িকভাবে শিক্ষকসংকট মেটাতে তিনজন শিক্ষক রাখা হয়েছে। এই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে। এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৬২৫ শিক্ষার্থী রয়েছে।

নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছে মো. নূরুল ইসলাম। গত ২৪ জুন তিনি বললেন, সমস্যার কারণে শিক্ষা বিভাগকে জানিয়ে ও অভিভাবকদের সম্মতিতে তিনজন খণ্ডকালীন শিক্ষক রাখা হয়েছে। আরও নেওয়া হয়েছে তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এ জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিজনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি নেওয়া হয়েছে। খণ্ডকালীন শিক্ষক ও দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মাসে তিন হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। তিনি বললেন, শিক্ষকসংকটের কারণে তাঁরা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছেন। সোমবার (১০ জুলাই) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শুধু দেবীগঞ্জের নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নয়, দেশের বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকটের পাশাপাশি শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক অনেক পদ শূন্য পড়ে আছে। ২০১৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী মাধ্যমিকে গড়ে প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীকে পড়ান একজন শিক্ষক। আর সরকারি মাধ্যমিকে গড়ে ৫২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকদের পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রেও আছে নানা অসুবিধা।

শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানামুখী সমস্যার কারণে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান না করলে ভালো কিছু করা কঠিন। এমনকি নতুন শিক্ষাক্রম ঠিকভাবে বাস্তবায়নের কাজও কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে দেশের মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা পরিচালিত হয় মাউশির তত্ত্বাবধানে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার মূল আসনে রয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। মাধ্যমিক শিক্ষকদের অভিযোগ, মাউশির অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি মাধ্যমিক স্তরের। অথচ সেখানে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁদের ভূমিকা নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ২০ হাজার ৯৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে) মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হয়। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি। সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২ জন। মোট শিক্ষক আছেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৮ জন।

শিক্ষকসংকট তীব্র হয়েছে

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের এই সংকটের মধ্যেও প্রায় দেড় শ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের পাশাপাশি (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) বছরের পর বছর প্রাথমিক স্তরেও (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) পড়ানো হচ্ছে। অথচ শিক্ষকদের আলাদা শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ করানো হচ্ছে না। শুধু প্রাথমিক স্তরে নয়, একই শিক্ষকসংখ্যা দিয়ে কয়েকটি বিদ্যালয়ে আবার উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতেও পড়ানো হয়। ফলে শিক্ষকসংকটটি আরও তীব্র হয়েছে।

পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা

সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেশির ভাগই ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে একই পদে চাকরি করে পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যেতেন। ২০১৮ সালে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ নামে নবম গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা হয়। এই পদে ২০২১ সালের জুনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী পদোন্নতিযোগ্য ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা’ পদে পদোন্নতির জন্য বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হয়নি। ফলে এই পদোন্নতিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদেও পদায়ন নিয়ে জটিলতা চলছে।

শিক্ষানীতির সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত

২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, মাউশিকে দুটি আলাদা অধিদপ্তর যথাক্রমে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ ও ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ হিসেবে গঠন করা হবে। কিন্তু শিক্ষানীতি প্রণয়নের ১৩ বছর হতে চলল। এখনো ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং মাদ্রাসার জন্য আলাদা ‘মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর’ করা হয়েছে।

আর্থিক অসুবিধা

মাধ্যমিক শিক্ষকদের একটি সূত্র বলছে, ১৮ বছর চাকরি করেও প্রাপ্য টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পাননি প্রায় ছয় হাজার শিক্ষক। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পেতে রিট করেছিলেন। রায় শিক্ষকদের পক্ষেও আসে। এরপর ২০১৯ সালে রায়ের সত্যায়িত কপি মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু মাউশির পক্ষ থেকে ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করা হয়।

কী বলেন তাঁরা

বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দীন মাহমুদ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সময়মতো তুলে ধরা ও সমাধানের দায়িত্ব মাউশির। তবে উভয় শাখা (কলেজ ও মাধ্যমিক) একত্রে থাকায় বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাতে গিয়ে মাউশির কাজের চাপ অনেক বেশি।

শাহাব উদ্দীন বলেন, শিক্ষকদের প্রাপ্য বকেয়া টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড সমস্যার সমাধান, পদোন্নতি, বিধিমালা সংশোধন, পদসোপান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা ও ধরে রাখা প্রয়োজন। মাউশির বিশাল কর্মযজ্ঞের ভার কমানোর জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাব অনুযায়ী আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করা গেলে মাধ্যমিকের নানা সমস্যার সমাধান ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

অবশ্য ভিন্নমত জানালেন মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরী। তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা আলাদা হলে কী হবে? তখন বরং প্রাথমিক শিক্ষার (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর) মতো অশিক্ষকদের হাতে চলে যেতে পারে মাধ্যমিক। এখন প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। দুর্বল দক্ষতা নিয়ে মাধ্যমিকে আসছে শিক্ষার্থীরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039291381835938