বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরপূর্তি উদ্যাপন করছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক, কবি-সাহিত্যিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ। তাদের পরনে ছিলো বাহারি পোশাক, মাথায় রংবেরঙের টোপর, হাতে উৎসবের নানা উপকরণ। র্যালিটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গলিতে পৌঁছালে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আব্দুন নূর তুষারের সঞ্চালনায় এর বিভিন্ন অংশে ছিলো বাংলার ঢাক, চাকমা নৃত্য, জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েল, ভরত নাট্যম, বই শুধু বই, বাদ্যযন্ত্রীর দল, জনপ্রিয় চরিত্র, মণিপুরী ন্ত্যৃ, মুক্তিযুদ্ধ, মাছ ধরার দল, বিয়ের দল, সাপুড়ে নৃত্য, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মারমা নৃত্য, লাঠি খেলা, বাংলার ঢাক, সহযোগী প্রতিষ্ঠান, পতাকাবাহী দল ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। এরপর শুরু হয় আপ্যায়ন পর্ব।
‘আলোকিত মানুষ চাই’ স্লোগানে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পথচলা শুরু হয়। ৪৫ বছর পূর্তিতে পুরো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবন সজ্জিত হয়েছে মনোমুগ্ধকর সাজে। সড়ক ও দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আলপনা। ৪৫ বছরের যাত্রা তুলে ধরা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে।
দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, কেন্দ্রের বিভিন্ন সময়ের কর্মসূচির শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রাঙ্গণ। স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় রাত ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাবেক ট্রাস্টি ও সাবেক সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, ট্রাস্টি ও সাবেক সচিব আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া, ট্রাস্টি ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আবদুস সামাদ, ট্রাস্টি ইফতেখারুল ইসলাম, ট্রাস্টি পারভীন মাহমুদ, ট্রাস্টি ডা. আবদুন নূর তুষার, ট্রাস্টি ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী, শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, চ্যানেল আই পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক, নাট্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, বিকাশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির, আইএফআইসি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সাবেক ট্রাস্টি শাহ আলম সারওয়ার এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ইন্দিরা রোডের একটি ছোটো বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা অব্যাহত রাখতে সকলের সমর্থন প্রত্যাশা করেন তারা।
শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মানুষ তৈরির অগ্রসেনানী। স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা তার আছে। এজন্য তাকে অভিনন্দন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে জাগ্রত করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের সকলকে অভিনন্দন জানান তিনি।
ছড়াকার আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক হিসাবে কাজ করেছি। ৪৫ বছর পূর্তির পুরো অনুষ্ঠানটি আমার জন্য এক আনন্দ আয়োজন। একদিকে কেন্দ্রের জন্মদিনের আনন্দ, অন্যদিকে কেন্দ্র এখন বিশাল কলেবরে তার যাত্রা শুরু করেছে। বিশাল ভবনে কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে এখান থেকে আরো বেশি মানুষ উপকৃত হবে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছরে বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্রোতের বিপরীতে গিয়েও যে কিছু একটা করা যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাস্তায় রাস্তায় বইয়ের লাইব্রেরি ছুটে বেড়ানোর বিষয়টি একসময় অকল্পনীয় ছিলো। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ৪০ বছর পর সমগ্র বাংলাদেশেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলো ছড়িয়ে পড়বে।