দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ থাকতে সর্তকবার্তা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির জুনেটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার শ ম গোলাম কায়ছার বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ কাঁচা রস খেতে চাইলে তা বিক্রি না করতে গাছি (খেজুরের রস সংগ্রহকারী) বা বিক্রেতাদের প্রতিও অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় খেতে কোনো বাধা নেই বলে জানানো হয়েছে।
সর্তকবার্তায় বলা হয়েছে, নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে আংশিক খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। ফলমূল পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। কারও এ রোগে লক্ষণ দেখা দিলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে সর্তকবার্তায় বলা হয়েছে, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৪ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত সাত বছরের মধ্যে তা সর্বোচ্চ। এ বছর মৃত্যু আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ মেলে। এখন পর্যন্ত মোট ৩৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের ৩৪টি জেলায় এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। সে বছর ৬৭ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৫০ জন। সে বছর ফরিদপুরে নিপাহ ভাইরাসে ৩৫ জন আক্রান্ত হন, তার মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। শতকরা হিসাবে যা মোট রোগীর ৭১ শতাংশ।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, চলতি বছর প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতদিন শুধু উত্তরাঞ্চলে সংক্রমণ ঘটছে ধারণা করা হলেও এখন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি দেশের মধ্যাঞ্চলে পাওয়া যাচ্ছে। নিপাহ সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারির ১০টি হুমকির একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
তিনি বলেন, মূলত খেজুরের কাঁচা রস পান করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইনে ব্যাপকহারে খেজুরের কাঁচা রস বিক্রি বেড়ে যাওয়া সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। খেজুরের রসে বাদুড় মুখ দেয়। সেখান থেকেই মানবদেহে ছড়ায় এ ভাইরাস। এ ছাড়া বাদুড়ের মুখের লালা, মল, মূত্র তালের রস বা তাড়ি এবং আংশিক খাওয়া ফল খেলে ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা বেঁচে যান, তাদের কেউ কেউ স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন চিরতরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যুর হার এত বেশি বলে জানা যায়নি। মৃত্যুর আশঙ্কা থাকার পরও নিপাহ ভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে। এ জন্য একযোগে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্কুল পর্যায়ে এই ভাইরাসে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।