দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা মানছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা। আচরণ বিধিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে বিধি নিষেধ আছে। কিন্তু রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্কুল, কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তা মানছেন না। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই হরহামেশাই প্রকাশ্যে তারা নৌকার মনোনিত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগে অংশগ্রহণ করেছেন। বক্তৃতা দিচ্ছেন, ভোটও চাইছেন।
শিক্ষকদের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এসব শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, যেসব শিক্ষক ও কর্মচারীরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা সবাই গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতা। তাদের কাছে হেনস্থার ভয়ে এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে পারেন না।
অভিযোগ উঠেছে, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন উপজেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা। আচরণ বিধিমালায় শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে নিষেধ থাকলেও তা পাত্তা না দিয় শিক্ষক-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব পালন করছেন।
গোদাগাড়ী মাটিকাটা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজু তফসীল ঘোষণার আগে থেকেই এখন পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচার ও নেতাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও খরচ বহনের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বেও আছেন।
গোদাগাড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মইনুল ইসলামও আছেন সহ-সভাপতির পদে। তিনিও নৌকার প্রার্থীর প্রচারণার জন্য বাসুদেবপুর ইউনিয়নসহ আরো দুইটি ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রেমতলী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মজিবুর রহমানের আরেকটি পরিচয় তিনি দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপাজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনিও নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে জনসভা করেছেন। প্রেমতলী সুকবাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পরভীন ও পিরিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম তোতাকে মাটিকাটা ইউনিয়নের নৌকার নির্বাচনী সভায় একটি স্কুলের কক্ষে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে।
গত ২১ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজন নির্বাচনী প্রচারের জনসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আকবর আলীকে ওমর ফারুক চৌধুরী সঙ্গে মঞ্চে দেখা গেছে। একই জায়গায় দেখা গেছে সুলতাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক এবং পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হককে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগর ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনী পোস্টার বিলিসহ ফেসবুকে নৌকার ভোট চেয়ে প্রচারণায় মেতে আছেন। এছাড়াও প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান হিরো, সোনাদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাইনুল ইসলাম, পাকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও সহকারী শিক্ষক জালাল উদ্দিন, হরিণ বিস্কা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, রাজাবাড়ীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস পিওন রুহুল আমিনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনী প্রচারণার জনসভা অধিকাংশ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজন করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী-১ আসনের গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী রিটানিং অফিসার আতিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী এসব করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কাছে এসব নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। আমরা তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এবং এ উদ্দেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারিকে ব্যবহার করতে পারবেন না।