জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে অনীহা রয়েছে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের। তার অনুসারীদের জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা মনোনয়ন না দিলে নির্বাচনে অংশ নিতে চান না রওশন এরশাদ।
শনিবার গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠকের পর বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রওশন এরশাদ চান জাপা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু জি এম কাদেরপন্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম দেননি রওশনপন্থীদের। দলে এমন বিভেদ রয়েছে। যাদের অবদান নেই, তারা দলের নিয়ন্ত্রক হয়ে গেছে। রওশন এরশাদ এক বছর ধরেই বলে আসছেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে দলের বর্তমান পরিবেশের কারণে নির্বাচনে যেতে রওশন এরশাদের আপত্তি রয়েছে।
রওশনপন্থীদের সূত্র জানায়, দলীয় নেতৃত্বের বিরোধ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে সপ্তাহখানেক ধরে চেষ্টা করছেন বিরোধীদলীয় নেতা। রোববার সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ পেতে পারেন রওশন এরশাদ। দেখা পেলে পরিস্থিতি তার অনুকূলে আসতে পারে। অন্যথা জি এম কাদেরের নেতৃত্ব মেনে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। অথবা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না রওশন এরশাদ।
জাপা সূত্রে জানা যায়, ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমের মতো দলগুলোকে আগামী সংসদে বিরোধী দল বানানোর পরিকল্পনা ছিল। এ কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল জাপা। বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘কিংস পার্টি’কে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসানোর পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে। এরপরই গত বুধবার আধা ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান বদলে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জাপা। জি এম কাদেরের একক নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে সরকার। তাই, রওশন আর সরকারের সমর্থন পাচ্ছে না।
সূত্রের ভাষ্য, এই সমীকরণের কারণে রওশন ও তার অনুসারীদের আর গণ্য করছে না জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা। তাই রওশনের অনুসারীদের দলীয় মনোনয়ন ফরম দেয়নি। বরং রওশনপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদের রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অথচ ২০১৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী বদল করে সাদকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন জি এম কাদের। তখন রওশনের পক্ষে সরকারের সমর্থন ছিল।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, কিংস পার্টিগুলোকে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে আনতে না পারায় জি এম কাদের সরকারি সমর্থন নিশ্চিত করে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন রওশন এরশাদ। কয়েক দিন আগেও তিনি প্রথমে মনোনয়ন ফরম নিতে রাজি না থাকলেও, এখন অনুসারীদের প্রায় সবাইকে বাদ দিয়ে নিজের এবং সাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলছেন।
জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দল জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে। রওশন এরশাদ ফোন করেছিলেন। তিনি নিজের, সাদ এরশাদ এবং ময়মনসিংহ-৬ আসনে ডা. কে আর ইসলামের জন্য তিনটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন। রওশন এরশাদ লোক পাঠালে ফরম দিয়ে দেব। প্রয়োজন হলে নিজে গিয়ে পৌঁছে দেব।
তবে গোলাম মসীহ বলেছেন, শুধু তিনজন নয়, সবার জন্য ফরম চেয়েছেন রওশন এরশাদ। সবাই এক সঙ্গেই ফরম নেবেন।
তবে জাপা সূত্রের ভাষ্য, রওশনের পক্ষে থাকা দলের মসিউর রহমান রাঙ্গা, জিয়াউল হক মৃধা ও কাজী মামুনুর রশিদকে কোনো অবস্থায় মনোনয়ন দিতে রাজি নন জি এম কাদের। প্রথম দু’জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন তিনি। পরের জন্য জি এম কাদের জাপা থেকে বাদ পড়েছেন। এই তিন নেতার কারণে রওশনের সঙ্গে বছর দুইয়েক ধরে বিরোধ চলছে জি এম কাদেরের। কাজী মামুন গত আগস্টে রওশনকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন।
অন্যদিকে শনিবারও জাপার বনানী কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন বোর্ড। আরও দুইদিন চলবে সাক্ষাৎকার।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ৩০০ আসনেই লাঙ্গলের প্রার্থী দেওয়া হবে। যারা দলে অবদান রেখেছেন, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে, তারা মনোনয়ন পাবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সাধারণ ভোটাররা যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এর মাঝে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।