শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ ছিল শামীমা খাতুনের। এর জের ধরে বাবার বাড়ি চলে আসেন তিনি। তবে স্বামীর অনুরোধে আবার ফিরে যান শ্বশুরবাড়ি। শামীমার লক্ষ্য ছিল সরকারি কর্মকর্তা হবেন। তাই সঙ্গে করে নেন বিসিএস প্রস্তুতির বইপত্র। চার দিন পর আবারও বাবার বাড়ি ফিরেছেন শামীমা, তবে লাশ হয়ে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের কুঠিপাইকপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে গত বুধবার দুপুরে শামীমা খাতুনের (২৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি একই উপজেলার ডাউকি গ্রামের মো. তান্নু মুন্সির মেয়ে। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন রাতেই নিজ গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
শামীমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ জুন শামীমার সঙ্গে কুঠিপাইকপাড়া গ্রামের শাহাবুল হোসেনের বিয়ে হয়। শামীমা স্নাতকোত্তর পাস। শাহাবুল একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। বিয়ের পর শামীমা জানতে পারেন, শাহাবুলের আগে একজন স্ত্রী ছিলেন এবং তিন বছর সংসার করার পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে মা–বাবার কষ্টের কথা ভেবে শামীমা বিষয়টি মানিয়ে নেন।
শামীমার বাবা মো. তান্নু মুন্সির অভিযোগ, মেয়ের শান্তি-সুখের জন্য জামাইকে যৌতুক হিসেবে নগদ টাকাসহ যখন যা দাবি করেছেন, তা দিয়েছেন। তারপরও জামাই কারণে-অকারণে মেয়েকে মারধর করতেন। মঙ্গলবার রাতেও নির্যাতন চালান, পরদিন সকালে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পেয়ে গেলে ঘটনার তিন ঘণ্টা পর প্রচার করেন যে শামীমা আত্মহত্যা করেছেন। তান্নু মুন্সি বলেন, তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করবেন।
শামীমার ভাগনি সাদিকা খাতুন বলেন, ‘সর্বশেষ বুধবার সকাল ৬টা ২১ মিনিটে মেসেঞ্জারে খালা (শামীমা) লিখে জানান, “শাহাবুল আমাকে রাতে মেরেছে।” এরপর বেলা ১১টার দিকে খবর আসে যে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া তাঁর লাশ বসতঘরের আড়ায় ঝুলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে শাহাবুল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, তাঁর স্ত্রী অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন। শামীমাকে কখনোই কোনো নির্যাতন করা হয়নি। মৃত্যুর পর লাশ চৌকিতে শুইয়ে রাখায় শরীরে ছোপ ছোপ লাল দাগ হতে পারে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোলদাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই গোলাম হোসেন শামীমার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে রাতে শামীমার মৃত্যু হয়েছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা বলা যাবে বলে জানান আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ।