দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্বর্ণপদক ও সনদ কুরিয়ারযোগে ফেরত পাঠিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নূরুল হুদা। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম এ স্বর্ণপদক ও সনদ হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গতকাল রোববার বিকেলে এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর স্বর্ণপদক ও সনদ পাঠান নূরুল হুদা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বলেন, ‘নূরুল হুদার পাঠানো স্বর্ণপদক ও সনদ আজ দুপুরে হাতে পেয়েছি। জিনিসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে নূরুল হুদা জানান, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বারবার দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্বর্ণপদক এবং প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক ও স্বর্ণপদকের মূল সনদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের নিকট প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ও স্বর্ণপদকের মূল সনদ ফেরত পাঠিয়েছেন।
নূরুল হুদার বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়। তিনি ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। এলএলবিতে (সম্মান) সিজিপিএ-৩ দশমিক ৬৫৪ এবং এলএলএমে ৩ দশমিক ৬০৭ সিজিপিএ অর্জন করেন। এলএলবি পরীক্ষায় ফলাফলের জন্য ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান নূরুল হুদা। তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্বর্ণপদক ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন নূরুল হুদা। সেখানে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে নূরুল হুদা দাবি করেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদন করেন তিনি। নিয়োগ বোর্ড বসার আগে বোর্ডের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও বিভাগের তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ করেন নূরুল। এসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর চেয়ে যাঁদের জিপিএ কম, এমন তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি ওই নিয়োগ বোর্ডকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে উল্লেখ করে নূরুল হুদা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত ইউজিসির তদন্ত কমিটির সামনে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর উপস্থিত হয়ে আমি ও আমার স্ত্রী শিক্ষক নিয়োগ–বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরি। ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ১ ও ২ নম্বর পর্যবেক্ষণে শিক্ষক নিয়োগ–বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানানো হয়।’
নূরুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য আবদুস সোবাহানের মেয়ে, জামাতাসহ ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে। প্রতিবেদনে ইউজিসি উল্লেখ করেছে, শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত প্রার্থীদেরও শিক্ষকদের পেছনে ধরনা ধরতে হয় কিংবা অর্থ লেনদেন করতে হয়। এটি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের অবমাননার শামিল। কিন্তু এ প্রতিবেদন প্রকাশের তিন বছর পার হলেও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’