নেই শিক্ষার্থী, নেই শিক্ষক তবুও এমপিওর তালিকায় স্থান পেয়েছে ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজ নামে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠান। গত ২৩ অক্টোবর সরকার ঘোষিত এমপিওর তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানটির নাম আসে।
ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের জয়নগর গড় পিংলাই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানক্ষেত সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে টিনসেডের কয়েকটি আধাপাকা ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কর্ম-দিবসেও মেলেনি কোন শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থী না থাকলেও ক্লাস রুমের সাথে বারান্দায় বাধাঁ ২টি গরুকে ঘাস খেতে দেখা গেছে। ফুলবাড়ী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে স্থাপন টাঙানো হয়েছে কলেজের সাইনবোর্ড। নাম তার ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজ।
এ ব্যাপারে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজের কোন কার্যক্রম নেই এই এলাকায়। তবে দু’বছর আগে একদিন পিকনিক খাওয়ার জন্য কিছু ছাত্র/ছাত্রী এসেছিলো এখানে। এরপর থেকে কলেজের কোন কার্যক্রম এ স্থানটিতে হয় না বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা। কাগজ কলমে পরিচালনা করা এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি তালিকায় কিভাবে গেল এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবু তৈয়ব সালেহউদ্দিন তুহিন ফুলবাড়ী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ইনস্টিটিউট কলেজের অধ্যক্ষ। তার এ কলেজেই ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজের কার্যক্রম চলে বলে এলাকাবাসী জানায় ।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সালেহউদ্দিন জানান, সদ্য এমপিও ঘোষিত মহিলা কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তিনি। আর কলেজটির অধ্যক্ষ তার শ্যালক রবিউল আউয়াল।
ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজের এমপিও এর বিষয়ে সালেহউদ্দিন আরও জানান,২০১৪ সালে একাডেমিক স্বীকৃতির পর ফুলবাড়ী মহিলা বিএম কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে দুইটি ট্রেডে ১৭০ জন ছাত্রী ও ৩জন শিক্ষক রয়েছেন । চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৯ জন শিক্ষার্থী এর মধ্যে পাশ করেছে ৩৫ জন। কাগজে কলমে স্থানের নাম ঠিকঠাক থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলে ফুলবাড়ী শহরে তার নিজ কলেজ ফুলবাড়ী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ইনস্টিটিউটে।
এদিকে এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির তালিকায় থাকা নিয়ে স্থানীয়রা বিস্ময় প্রকাশ করছে। চারদিকে চলছে নানা আলোচনা। দীর্ঘদিন থেকে এমপিও ভূক্তির অপেক্ষায় থাকা উপজেলার বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজ, ফুলবাড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,শালগ্রাম নিম্মমাধ্যমিক বিদ্যালয়, চকসাহাবাজপুর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়,আমডুঙ্গি হাট ইমান উদ্দিন চৌধুরী আলিম মাদরাসা, লালপুর বালিকা দাখিল মাদরাসা, লক্ষিপুর স্কুল এন্ড কলেজ। এমপিও না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকতা করে হতাশ হয়ে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এমপিও না পাওয়া ফুলবাড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন বলেন, দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় থেকে শিক্ষকতা করেও এখন পর্যন্ত বেতন-ভাতার কিছুই পাননি ৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষকেরা। সে কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। এমপিও তালিকার পুঃন বিবেচনার দাবী তুলেছেন ভুক্তভুগী শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সমসের মন্ডল বলেন, এমপিওভুক্তির বিষয়ে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। সচিব ও মন্ত্রীরা এসব কাজে জড়িত। তাঁরা কিভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা দিয়েছেন সেটি তারা ভাল জানেন।সংশ্লিষ্ঠরাই ভাল জানেন কী ভাবে এমন তালিকা হয়েছে।