ইউরোপীয় দেশগুলোতে ‘বিপন্ন’ তকমা খুব সম্ভবত হারাতে পারে নেকড়েরা। ওই মহাদেশ জুড়ে নেকড়েদের হামলায় গৃহপালিত পশুপাখিদের প্রাণহানি রুখতে এরইমধ্যে তৎপর হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ নিয়ে হুঁশিয়ারির সুর শোনা গেছে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের কণ্ঠে। ইউরোপে নেকড়েদের উপর থেকে সুরক্ষাকবচ সরিয়ে নেয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উরসুলা।
তিনি বলেছেন, ইউরোপের কয়েকটি অ়ঞ্চলে গৃহপালিত পশুপাখি এমনকি মানুষজনের ক্ষেত্রেও বিপদসঙ্কেত বয়ে আনছে নেকড়ের দলের আক্রমণ।
নেকড়ের সংখ্যা জানানোর জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর স্থানীয় কমিটি, বিজ্ঞানী ওসরকারি আধিকারিকদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন উরসুলা। নেকড়েদের হামলায় জনজীবনে কী প্রভাব পড়েছে, তা-ও জানানোর কথা বলেছেন তিনি। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দেয়ার অনুরোধ করেছেন উরসুলা।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’র দাবি, নেকড়ে ‘শিকারে’ নেমেছেন উরসুলা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে জার্মানির হ্যানোভারে পরিবারের খামারবাড়িতে নেকড়ের হামলায় তাঁর প্রিয় ঘোড়া ডলির মৃত্যু হয়। ঘটনাচক্রে, তার পরেই আসরে নেমেছেন উরসুলা।
জার্মান রাজনীতিক উরসুলা আরও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে নেকড়েদের সুরক্ষাকবচ নিয়ে আইন শিথিল করা হতে পারে। যদিও সমস্ত পরিসংখ্যান এবং মতামত গ্রহণের পরেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই ইউরোপে নেকড়ে শিকারের চল ছিলো। নেকড়েদের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করায় গত শতকের পাঁচের দশকে এ নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়। সে সময় বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে নেকড়ের কয়েকটি প্রজাতিকে বিপন্ন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
নেকড়ে শিকারে বিধিনিষেধ আরোপ করার জেরে ইউরোপ জুড়েই এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, ইইউ সদস্যভুক্ত ২৭টি দেশে এখন অন্তত ১৯ হাজার নেকড়ে থাকতে পারে। এর মধ্যে বুলগেরিয়া, গ্রিস, ইটালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং স্পেনে সংখ্যাটি হাজারের বেশি। উরসুলার নিজের দেশ জার্মানিতে ১৬১টি নেকড়ের দল রয়েছে বলে জানিয়েছে ফেডেরাল উল্ফ ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড অ্যাডভাইজ়ারি অফিস। প্রতিটি দলে আট থেকে ১২টি নেকড়ে থাকে। এ ছাড়া, সে দেশে আরও ৪৩ জোড়া এবং ২১টি নেকড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পরিবেশবিদরা আরও জানিয়েছেন, শুধু গত দশকেই নেকড়েদের সংখ্যায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই তাদের সুরক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। যদিও উরসুলার দাবি, ইইউ-এর আইনেই নেকড়ে শিকার করা নিয়ে শিথিলতা রয়েছে।
জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য বাভারিয়ার যেমন গৃহপালিত পশুপাখির উপর নেকড়েদের হামলা হলে আত্মরক্ষায় তাদের মেরে ফেলতে পারেন কৃষকেরা। গত বছর ব্র্যানডেনবার্গেও একের পর এক নেকড়ের দলের হামলার পর একই পদক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছে সেখানকার প্রশাসন।
যদিও ইইউ-এর একটি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৯৯২ থেকে নেকড়েদের সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তবে কি নেকড়েদের মেরে ফেলার অনুমতি দেওয়া হবে? উরসুলার ঘোষণার পর এ প্রশ্ন উঠছে।
কমিশনের মুখপাত্র অ্যাডেলবার্ট জাঞ্জ অবশ্য বলেন, গোটা বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যান পেলে তবেই এ নিয়ে চিত্রটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। এবং তার পরেই আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারব।
উরসুলার নিজের দেশের পরিবেশমন্ত্রী স্টেফি লেমকে অবশ্য চরম পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, গৃহপালিত পশুদের বাঁচাতে নেকড়েদের দেখা মিললেই যাতে গুলি করে মারা যায়, চলতি মাসের শেষে সে প্রস্তাব করার কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন।
প্রায় একই সুর শোনা গেছে ফ্রান্সের কৃষিমন্ত্রী মার্ক ফেনোর কণ্ঠে। তাঁর মতে, এই বিষয়ে বাস্তববাদী হয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এক সময় এই নিয়ম করা হয়েছিল বিপন্ন প্রাণিদের সুরক্ষার জন্য। তবে এখন কৃষক ও তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন।
সূত্র: আনন্দবাজার
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।