ছাত্রদলের নেতাদের অস্ত্রসহ গ্রেফতারের যে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি করেছে, তাকে ‘দুর্বল স্ক্রিপ্টের নাটক’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সহযোগী সংগঠনটি বলেছে, ছাত্রদল কলমের রাজনীতি করে, অস্ত্রের রাজনীতি করে না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ছাত্রদলের ছয় নেতাকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতারের কথা জানায়। ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বলছে, ১৯ থেকে ২২ আগস্ট—এই চার দিনে সংগঠনের মোট ২০ নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন, তার সংগঠনের নেতাদের আটকের পর অস্ত্রসহ গ্রেফতারের নাটক সাজিয়ে তাঁদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকার সময়ে ছাত্রদলের নেতাদের ওপর বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে। গণতন্ত্র, গণমানুষের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াই যত বেগবান হচ্ছে, অস্ত্র উদ্ধারের মতো দুর্বল স্ক্রিপ্টের (চিত্রনাট্য) নাটকের সংখ্যা তত বেশি দীর্ঘতর হচ্ছে।
রাশেদ ইকবাল খান বলেন, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা স্পষ্ট চিত্তে বলতে চান, নিপীড়ন-নির্যাতন, হুমকি, নানা কল্পকাহিনিতে তারা মোটেও বিচলিত নন। গণতন্ত্রের পক্ষে ছাত্রদলের যে রক্তস্নাত পথচলা, সেই পথচলা কোনো কিছুতেই থামবে না, থামানো যাবে না। দেশে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পর দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে হবে।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির ভাষ্য, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি বলেন, সহিংসতার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। তার এই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণে অতি উৎসাহী গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার করেছেন।
রাশেদ ইকবাল খান বলেন, ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে আজ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অবাধে যাতে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া যায়, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে প্রতিবাদ করা না যায়, সে উদ্দেশ্যেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
রাশেদ ইকবাল খানের বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ। তিনি বলেন, অস্ত্রসহ ছাত্রদলের নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর ডিবি তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেনি। তারা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চান, ছাত্রদলের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। বিগত দিনের কোনো আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হাতে অস্ত্র দেখা যায়নি। বরং ছাত্রদল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে গেলে যাঁরা অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন, তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
সাঈফ মাহমুদ বলেন, ছাত্রদল কলমের রাজনীতি করে, অস্ত্রের রাজনীতি করে না। ছাত্রদলের ডাকে লাখ লাখ সাধারণ শিক্ষার্থী রাজপথে জড়ো হন। তাই ছাত্রদলের অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি তানজিল হাসান, তবিবুর রহমান, রিয়াদ ইকবাল, নিজাম উদ্দিন, মাহবুব মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, নাদির শাহ পাটোয়ারি প্রমুখ।