মঞ্চে উঠে সম্মাননা নেওয়ার প্রতিটি মুহূর্ত সোনায় মোড়া! সিমরন দাস, ভূমিকা বর্মণ, ঋতিকা ওরাওঁ, প্রতিমা বিশ্বাসের মুখগুলোয় এক রাশ হাসি ছড়িয়ে পড়ছিলো। স্কুল-পোশাকে মঞ্চের আলোয় ভাসছিলো ওরা। দর্শকাসন থেকে ঘন ঘন হাততালিতে মঞ্চ জুড়ে তখন যেনো অনন্য এক দীপাবলি। জীবনের নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পড়াশোনা, খেলাধূলায় তাদের সফল হওয়ার লড়াইকেই কুর্নিশ জানানো হল ‘দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সেলেন্স, উত্তরবঙ্গ-২০২৪’-এর অনুষ্ঠানে, সোমবার ‘দ্য টেলিগ্রাফ এডুকেশন ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে। গতকাল মঙ্গলবারও আরো অনেকের হাতে এমন সম্মান তুলে দেয়া হবে।
শিলিগুড়ি মহকুমার দুলালজোত নেপালি হাই স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া সিমরনের বাবা সুভাষ দাস ট্রাকচালক। সিমরনের এক ভাই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে নবম শ্রেণিতে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল সিমরন। একই স্কুলের ছাত্রী ভূমিকার বাবা দিলীপ বর্মণ অটোচালক। ভূমিকারা চার ভাইবোন। ভূমিকা ৭৩.৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে নবম শ্রেণিতে উঠেছে। শিলিগুড়ি শহরের নেতাজি গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী অনুশ্রী তালুকদারের বাবা টোটোচালক। বালুরঘাট হাই স্কুলের পড়ুয়া সাগ্নিক সাহার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। রাজ্যে মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় ছিলো ওই পড়ুয়া। এমন আরো অনেকের হাতেই হাতে বৃত্তি তুলে দেয়া হলো।
সিমরন বলেন, খুব ভালো লাগছে। ভালো করে পড়াশোনা করতে চাই।’ ভূমিকার কথায়, আর্থিক সমস্যায় যাতে পড়া বন্ধ না হয় সেই চিন্তা হয়। এই সহযোগিতায় উপকার হল। খুব ভালো লাগছে।
মঞ্চে ‘দ্য টেলিগ্রাফ এডুকেশন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান অমিতাভ দত্ত বলেন, শহরের নামকরা স্কুলের সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক স্কুলের পড়ুয়ারা রয়েছে। তারা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে। এই সম্মান তাদের উৎসাহ দিতেই। যারা সম্মান পেল তাদের দেখে, বাকি পড়ুয়া, স্কুলগুলো উৎসাহী হলে এই প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
অনুষ্ঠানের মুখ্য স্পনসর কলকাতার অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়। সহযোগিতায় রয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট’, দ্য ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজ’, ‘জেআইএস গ্রুপ’, ‘পিসিএম’। সহযোগী স্পনসর ‘এসআইপি অ্যাবাকাস’। রেডিয়ো পার্টনার: ‘রেডিয়ো মিষ্টি’।
স্কুলগুলোর একাংশ পুরস্কার পেল রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, শিক্ষাগত সাফল্য, সামাজিক কাজ এবং অন্য কাজকর্মের জন্য। সাহসিকতার জন্য পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেয়া হলো পুরস্কার। তা ছাড়া, সার্বিক উৎকর্ষের জন্য, পড়াশোনায় ভাল ফলে, খেলাধূলা, গানবাজনায় সাফল্যের জন্য পুরস্কার পেল পড়ুয়ারা।
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার জন্য সম্মানিত করা হলো মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরকে, ‘মেরিট’ সম্মান পেল বালুরঘাট হাই স্কুল, রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র।
পরিবেশবান্ধব স্কুলের জন্য পুরস্কার পেল মালদহের শোভানগর হাই স্কুল। প্রশিক্ষক হরিস্বামী দাস বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি পাচ্ছে এটাই বড় ব্যাপার। আরো অনেকেই এতে উৎসাহী হবে।