ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান পদত্যাগ করেছেন। বুধবার ই-মেইলের মাধ্যমে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণ হিসেবে তাকসিম স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন থেকেই তাকসিমের খবর ছিল না। তবে ৪ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত তাঁর মোবাইল নম্বর খোলা ছিল। ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বলতে পারছেন না তাকসিম কোথায়। তারা বলছেন, এমডি ঢাকাতেই আছেন। তবে গ্রেফতার এড়াতে বারবার স্থান বদলাচ্ছেন। তবে এমনও আলোচনা আছে, তাকসিমের পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি ছাড়া পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন।
তাকসিম এ খানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মাধবগোপাল সমকালকে বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট স্যারকে অফিসে নামিয়ে দেওয়ার পর আমাকে চলে যেতে বলেন। এর পর আর স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কয়েক দিন আগে গাড়িটি ওয়াসায় জমা দিয়ে এসেছি।’
জানা যায়, ওই দিন গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর অন্য একটি গাড়িতে করে তাকসিম অফিস ছাড়েন। এর পর আর অফিসে যাননি। নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাকসিমকে না পেয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) একেএম শহিদ উদ্দিনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডেকে নেয়া হয়।
একেএম শহিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, গত রোববার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কুশল বিনিময় হয়। আগে এমডি না থাকলে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দিয়ে যেতেন। কর্মস্থলে এমডি অনুপস্থিত থাকলেও তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ কারণে সংস্থার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ৮ আগস্ট রাত ১১টার দিকে তাকসিম এ খান তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে জুম মিটিং করেন। রোববার থেকে সবাইকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি রোববার থেকে নিজেও অফিস করবেন বলে উল্লেখ করে তাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘আমি ওয়াসার এমডি আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’
তবে ওই দিন তিনি অফিসে যাননি। সেদিন থেকেই তাকসিমকে গ্রেফতারের দাবিতে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিনই ওয়াসা ভবনে বিক্ষোভ করছেন। এ পরিস্থিতিতে তাকসিম গত সোমবার রাতে অনুগত কর্মকর্তাদের নিয়ে আবারও মঙ্গলবার দুপুর ২টায় জুম মিটিং আহ্বান করেন। তবে পরে ওই মিটিংয়ে যোগ দেননি তিনি।
তাকসিমবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, তাকসিম কয়েক দিন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওয়াসার এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের বাসায় অবস্থান করেছেন। পরে একটি দেশের দূতাবাসে আশ্রয়ে থেকেছেন। কয়েক দিন হোটেল সোনারগাঁওয়ে থেকেছেন। ওয়াসারই একজন তাঁকে সোনারগাঁও হোটেলে প্রাতরাশ সারতে দেখেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে হোটেল থেকে কেটে পড়েন তাকসিম।
ঢাকা ওয়াসায় সূত্র বলছে, বিএনপিপন্থি কয়েকজন কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, শ্রমিক দল নেতাকে তাকসিম অনেক সুবিধা দিয়েছেন। তারা তাকসিমকে ওয়াসাতে রক্ষার চেষ্টা করছেন। তাদের পরামর্শেই গতকাল পর্যন্ত তাকসিম পদত্যাগপত্র জমা দেননি। তবে আজ বুধবার সকাল হতে না হতেই ই-মেইলের মাধ্যমে তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার খবর জানা যায়।
তাকসিম এ খান ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে প্রথম দায়িত্ব পান। এরপর থেকে তার মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে তার মেয়াদ সপ্তমবারের মতো বৃদ্ধি করা হয়।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের পর নিজ কার্যালয়ে আর যাননি তাকসিম এ খান।