এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে চরম অবহেলাকারী পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্ল্যাকলিস্টেড করবে শিক্ষা বোর্ডগুলো। গত মঙ্গলবার এবারের এইচএসসির খাতা পুনর্মূল্যায়ন বা চ্যালেঞ্জের ফল প্রকাশের পর এ তালিকা তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসির ফলে দেখা গেছে, এবার ১৩৯৮ জন পরিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছেন। এর আগে কখনোই এতো অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করে পাস করেননি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। এছাড়া নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৮৫ জন। ফেল করার পরেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন একজন। যদিও অভিভাবক ও সাধারণ শিক্ষকরা মনে করছেন, আরো খাতা পুনর্মূল্যায়ন হলে আরো বহু শিক্ষার্থীর ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ ছিলো।
শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট এক কর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা শিক্ষার্থীদের খাতায় প্রাপ্ত নম্বর নতুন করে গুনেই এই বিশাল পরিবর্তন। এতে পরীক্ষকদের অবহেলার বিষয়টি আরো স্পষ্ট।
প্রসঙ্গত, এর আগে কোচিং পরিক্ষার্থীদের দিয়ে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো দৈনিক আমাদের বার্তায়। শিরোনাম ছিলো ‘এইচএসসির খাতা অবৈধ কোচিংয়ের হাতে’। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর বাড্ডার ন্যাশনাল কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজির পরীক্ষক মো. আবু তাহের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি খাতা তার কোচিংয়ের ছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। যা নিয়ে ওই কোচিংয়ে পড়তে আসা ভিকারুননিসা নূন অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ফটোসেশন করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে ছবি আপলোড করে দেন।
সে কথা স্মরণ করিয়ে সদ্য প্রকাশিত খাতা পুনর্নিরীক্ষার ফলের বিশাল পরিবর্তন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মনোবিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিশোর-কিশোরীদের কোমল মনোজগতের কথা মাথায় রেখে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চরম বিপযস্ত সময় কাটান জানিয়ে তারা বলেন, এর ফলে শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হন। নিজের পরিবার আর সহপাঠীদের কাছেও তাদের দু:সহ সময় কাটাতে হয়। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো আর না ঘটে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ বাচ্চাদের মানসিক যন্ত্রণার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? যেসব শিক্ষক খাতা দেখায় ভুল করেছেন তাদের খুঁজে বের করে এ দায়িত্ব থেকে বাদ দিতে হবে। আর শিক্ষকদের মনোবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যেনো তারা অনুধাবন করতে পারেন তাদের এ ধরনের ভুলে শিক্ষার্থীদের কতোটা ক্ষতি হয়।
আর অভিভাবকদের অভিমত, উত্তরপত্র নিরীক্ষকদের দায়িত্ব অবহেলায় প্রথমে খারাপ করা শিক্ষার্থীদের একটি মাস মানসিক যন্ত্রণা মোকাবিলা করতে হয়েছে। অযোগ্যদের খাতা দেখার দায়িত্ব দেয়ায় এমন বিপর্যয়। খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পান তোষামোদ করা শিক্ষকরা। তাই যেসব শিক্ষক খাতা দেখায় ভুল করেছেন তাদের শাস্তির হোক। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগের রেকর্ড পর্যালোচনা করে এ দায়িত্ব দেয়া হোক।
বিষয়টি নিয়ে ভাবছে শিক্ষা প্রশাসনও। শিক্ষার্থীদের এমন মানসিক ভোগান্তির জন্য দোষী শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, আমাদের কিছু পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্বহীনতার কারণে এমনটি হয়। তারা অনেক সময় বৃত্ত ভরাটে ভুল করেন, নম্বর তুলতে ভুল করেন, আর এর ফল ভোগ করেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। প্রতি বছরই এমন কিছু ভুল হয়। আমরা এবারও দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। যারা ভুল করেছেন তাদের খুঁজে বের করা হবে। শোকজ করা হবে। ব্ল্যাকলিস্টেড করা হবে। আর কালোতালিকাভুক্ত হওয়া শিক্ষকরা আগামী ৫ বছর পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।