পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরিতে সারারাত অফিসে স্বামী, ভাইভায় স্ত্রী-শ্যালিকা - দৈনিকশিক্ষা

পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরিতে সারারাত অফিসে স্বামী, ভাইভায় স্ত্রী-শ্যালিকা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মাদারীপুর |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মাদারীপুর : মাদারীপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র তৈরীর সময় সিভিল সার্জন অফিসের দুই কর্মচারীর স্বজন পরীক্ষার্থী হওয়া স্বত্বেও সারারাত অফিসে ছিল। সকালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় এক কর্মচারীর স্ত্রী ও শ্যালিকা এবং আরেক কর্মচারীর স্ত্রী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এ নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। এ ছাড়া ভাইভা পরীক্ষা চলাকালীনও তাদের অফিসের বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে দেখা যায়। অন্য এক স্টাফ চাকরি দেয়ার ব্যপারে ঘুষের দর কষাকষিও করেছেন।

ওই রাতে কেন তারা দায়িত্বে ছিল সে বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের কর্তারা জানান, প্রশ্ন করার সময় কেউ ভিতরে যেতে পারেনি। স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ দিতে তারা বদ্ধ পরিকর। তবে কোন স্টাফ ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।

বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) জানান, অফিসের কর্মচারীর স্ত্রী ও স্বজন প্রার্থী সেটা জেনেছি ফল প্রকাশের পরে। সেটা আগে জানলে তাদের অফিসে রাখা হতো না।

জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবাবিভাগ, প্রশাসন-১ শাখা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা এর স্মারকনং-স্বাসেবি/প্রশা-১/এডি/২সি- ১৩/২০১০-১২১৫ তারিখঃ ০৭/০৮/২০২২খ্রী: মূলে প্রাপ্ত ছাড়পত্র মোতাবেক সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মাদারীপুর ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সমূহে স্থায়ী রাজস্ব খাতের অন্তর্ভুক্ত ১১-১৭ গ্রেডের (পূর্বতন ৩য়  শ্রেণি) পদসমূহে ৭৩ জন লোক নিয়োগের লক্ষ্যে গত শুক্রবার (১০ মে) লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। 

সোমবার ও মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ভাইভা পরীক্ষা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় পরিচালক (ঢাকা) ফরিদ হোসেন মিঞার নেতৃত্বে ৫ সদস্য একটি টিম আসে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। বৃহস্পতিবার দিনশেষে মাদারীপুর সিভিল সার্জন অফিসে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তারা প্রবেশ করে। প্রশ্নপত্র তৈরী করতে সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে তারা প্রবেশ করে দোতলায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত সেখানে কাজ করে সিভিল সার্জন অফিসের দুইজন কর্মচারী। ওই অফিসের হিসাবরক্ষক খাইরুল আলম ও পরিসংখ্যানবিদ (ভারপ্রাপ্ত) মীর রিয়াজ আহমেদ। 

শুক্রবার সকালে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় খাইরুল আলমের স্ত্রী আছিয়া স্টোর কিপার পদে ও তার শ্যালিকা আয়শা স্বাস্থ্য সহকারী পদে। পরীক্ষায় দুজনই উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। বিষয়টি নিয়ে তখনই শুরু হয় গুঞ্জন। এছাড়া পরিসংখ্যানবিদ মীর রিয়াজের স্ত্রী আফসানা খান আখিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানা যায়। 

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এতে অনেক মেধাবীরাও স্থান দখল করে নিতে পারেনি। তবে প্রশ্ন তৈরী করার রাতে দুজন অফিসে তাদের নিজেদের কাজের কারণে অবস্থান করেছে বলে স্বীকার করেন ওই দুই কর্মচারী। তবে প্রশ্ন তৈরীর কক্ষে তারা যাননি। কেন ওই রাতেই তারা অফিসে করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন নিয়োগ সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরী ও হাজিরা সিট তৈরীর কাজ করেছেন তারা।

সিসিটিভি ক্যামেরা সচল আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দিতে তারা বেশ বিচলিত হন। তবে সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান প্রয়োজনে ফুটেজ চেক করে দেখার সুযোগ আছে। 

এছাড়া এ দপ্তরের এক কর্মচারী রোকসানা আক্তার নিয়োগ দেয়ার শর্তে ঘুষের টাকার দর কষাকষির অডিও রেকর্ড আসে প্রতিবেদকের হাতে। তার দাবি ৯ লাখ টাকা হলে স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকুরীর নিশ্চয়তা দেয়া যাবে। চাকরি না হলে টাকা ফেরৎ দেয়া হবেও বলে জানান তিনি। 

ওই দপ্তরের আরেক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার কাছে লোক ঠিক করতে বলা হয়েছিল গোপনে। টাকার বিনিময়ে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয় তাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, খাইরুল ও মীর রিয়াজ আহমেদ রাত ৪ টার দিকে তড়িঘড়ি করে বাসায় চলে যান। তখনও জানা ছিল না তাদের স্ত্রী ও একজনের স্ত্রী ও শ্যালীকা চাকুরী প্রার্থী। লিখিত পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর জানা যায় তারা ভাইভা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের স্ত্রীর চেয়ে অনেক মেধাবীরা পরীক্ষায় অংশ নিলেও তারা পরীক্ষায় ভাল করতে পারেনি। যদি নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে তারা কোনমতেই পাশ করতে পারবেন না। শুধু তাই নয় তাদের মোবাইল ট্রাকিং ও ম্যাসেজ উদ্ধার করতে পারলে প্রশ্ন বিক্রির ও প্রমান পাবেন বলে নিশ্চিত।

ওই অফিসের আরেক কর্মচারী বলেন, সব দেখি বুঝি কিছু বলতে পারি না। ছোট চাকরি করি। পরে আমার সমস্যা হবে। যারা লাইন করছে তারা প্রফুল্ল মনে ছিল। যারা বড় স্যারের সাথে কথা বলতে পারে তারা অনেক কিছুই করে নিতে পারে। আমরা অবহেলিত ছিলাম -থাকবো।  তবে যাদের স্বজন পরীক্ষার্থী তারাও ভাইভার সময় ডিউটি করে ভিতরে ঘনঘন যায়। গোয়েন্দারা তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। রোকসানার কল লিস্ট চেক করলে আরও তথ্য বের হয়ে আসবে।

মীর রিয়াজ আহমেদ বলেন, তিনি ওই রাতে অফিসেই ছিলেন। তবে তার স্ত্রী পরীক্ষা দিয়েছে তা অস্বীকার করেন তিনি। হাজিরা সিট ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরীর কাজে নিয়োজিত ছিল বলে স্বীকার করেন।

খাইরুল আলম বলেন, তিনি ওই রাতে অফিসে ছিলেন তবে প্রশ্ন করা হয়েছে অন্য রুমে সেখানে তিনি যাননি। তার স্ত্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করলে ও শ্যালিকার কথা অস্বীকার করেন। তার দাবি তার স্ত্রী মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছে। 

রোকসানা জানায়, স্যারের সাথে কথা বলে জানাব কত লাগবে? কিছুক্ষণ কল মিউট রেখে পরে জানান ৯ লাখ টাকা স্যারের ঠিক দিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী পদে। বড় পদের জন্য আরও বেশি লাগবে।

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ খানের কাছে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন। কিছু জানার থাকলে অফিসে আসেন। এখন ভাইভা পরীক্ষা চলে। পরে তার কাছে গেলে তিনি বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। কেউ টাকার লেনদেন করছে এমন অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, নিয়োগ কার্য সম্পন্ন করতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট টিম আনা হয়েছে। অফিসের কর্মচারীর স্ত্রী ও স্বজনপ্রার্থী সেটা জেনেছি ফল প্রকাশের পরে। সেটা আগে জানলে তাদের অফিসে রাখা হতো না। তবে নিয়োগ স্বচ্ছ হবে।

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042109489440918