প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের লেখা ও ছবিতে ‘ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছে’। অষ্টম শ্রেণির আনন্দ পাঠে বিদেশি গল্পের অনুবাদ। বানান ভুল। এসবই নতুন ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের বোর্ডের পাঠ্যবইয়ে আছে। নতুন পাঠ্যবইয়ের এমন নানা ভুল চোখে পড়েছে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা তুলে ধরতেও দেরি করছেন না কেউ। ভুলের সঙ্গে ফেসবুক স্ট্যাটাসে দিয়ে দিচ্ছেন নিজের মতও।
গত রোববার বই উত্সবে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত দেশের কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বোর্ডের নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। এ বছর ৪ কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর জন্য ৩৬ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন এই পাঠ্যবই নিয়ে বেশ কিছু তথ্য ও মত দেন অভিভাবকরা।
প্রশান্ত কুমার নামে একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছে!”প্রথম শ্রেণির বইয়ে এ লেখা ও ছবি দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষার মান বেড়েছে বলেই ছাগল গাছে উঠতে পেরেছে। কোন জাতের লেখাপড়া জানা লোকজন এ জাতের বই প্রণয়ন করে?’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: জাহিদ হোসেন বলেন, শিক্ষাক্রম নতুন করে সংশোধন ও পরিমার্জন করার পর ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রথম শ্রেণিতে বাংলা পাঠ্যবইটির ১১ পাতায় অ-তে অজ (ছাগল) বোঝাতে গিয়ে এই ছবিটি আছে। আমরাও এটি পড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ছবিটি ভুল। কারণ ছাগল গাছে উঠে আম খায় না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বোর্ড থেকে যেভাবে দেবে সেভাবেই আমরা শিক্ষকরা পড়াই। এটি পাণ্ডুলিপি যারা তৈরি করেছেন তাদের যেমন ভুল, তেমনি যারা পাণ্ডুলিপিটি পরীক্ষা ও নিরীক্ষা করেছেন তাদেরও ভুল। নিরীক্ষকরা পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি পড়ে দেখেন বলে মনে হয় না। যার কারণে পাঠ্যবইয়ে অনেক ভুল থাকে। এই বই তৈরির পেছনে সরকারের অনেক অর্থ অপচয় হয়।
হাবিবুর রহমান নামে একজন অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠ বইটির প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র তুলে ধরে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘খালি বিদেশি টিভি সিরিয়ালেই সমস্যা! এই যে বইটি, অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠ। এখানে সবগুলো গল্প বিদেশি গল্প থেকে অনূদিত। এসবের জন্য কি কোনো প্রতিবাদ হবে!!!’
অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠ বইটির সূচিপত্রে দেওয়া সাতটি গল্পের সবগুলোই বিদেশি লেখকদের গল্প, উপন্যাস অবলম্বনে লেখা বা ভাষাগত রূপান্তর করা হয়েছে। গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে ‘কিশোর কাজী’, মার্ক টোয়েনের ‘রাজকুমার ও ভিখারির ছেলে’, ড্যানিয়েল ডিফোর ‘রবিনসন ক্রুশো’, ফরাসি উপন্যাসিক মহাকবি আবুল কাশেম ফেরদৌসীর ‘সোহরাব রোস্তম’, উইলিয়াম শেকসপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ওয়াশিংটন আরবি রচিত গল্প অবলম্বনে ‘রিপভ্যান উইংকল’ এবং লেভ তলস্তয়ের ‘সাড়ে তিন হাত জমি’।
এদিকে প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে ‘ও’-তে ‘ওড়না চাই’ বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নানা মন্তব্য করেছেন। এর মধ্যে আবদুর রহিম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ সম্পর্কে মন্তব্যের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের বানান ভুলের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কোথায় যেন পড়েছিলাম, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাও? তাহলে তার প্রাথমিক শিক্ষায় ভুল ঢুকিয়ে দাও। প্রথম শ্রেণির বর্ণ পরিচয়ে ‘ও’-তে বলা হয়েছে ওড়না চাই। পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে দেখলাম ঘোষণা বানান ঘোষনা, সমুদ্র বানান সমুদ। আর বললাম না।’