২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক সংস্কার ও পরিমার্জন এবং পরিবর্ধন সংক্রান্ত প্রায় সব কমিটিতে থাকা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের গল্প-প্রবন্ধ বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে। বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে তার একাধিক গল্প-প্রবন্ধ ছিলো। তাছাড়া অনেক বইয়ের সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তার লেখা গল্প-প্রবন্ধ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি। পাশাপাশি সম্পাদনায় যুক্ত হিসেবে বইয়ে থাকা তার নামও বাদ দেয়া হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এনসিটিবির সম্পাদনা শাখা সূত্র জানায়, একাদশ শ্রেণির বাংলা বইয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ শিরোনামে একটি লেখা ছিল। সেটি বাদ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের সব বই থেকেও জাফর ইকবাল লেখাগুলো পুরোপুরি বাদ পড়ছে।
আরো পড়ুন: পাঠ্যপুস্তকখাতে আওয়ামী জমানায় ৩ সহস্রাধিক কোটি টাকা লুট
বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, সক্রিয় শিখনপ্রক্রিয়া থাকায় আগামী বছর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেয়া হলেও সেখানেও কিছু পরিমার্জন হচ্ছে। কিন্তু চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই দেয়া হবে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রমের আলোকে। আর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা।
পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই হলেও বিষয়বস্তুতে কিছু পরিবর্তন হবে। পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ইতিমধ্যে পাঠ্যবই আছে। প্রসঙ্গত, শিক্ষাক্রম ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হলেও সর্বশেষ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই শিক্ষাক্রমের আলোকে বই দেয়া হয়েছে। সেগুলোই এখন পরিমার্জন করে ছাপার উপযোগী করা হচ্ছে। এই কাজে ৪১ ব্যক্তি জড়িত।
নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে একেকটি শ্রেণির জন্য ১০টি বিষয় ছিল। পুরোনো শিক্ষাক্রমে বিষয় আরও বেশি। তাই বইয়ের সংখ্যা বেশি। যেমন পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ২৩ (সব কটি সবার জন্য নয়)।
পুরোনো শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য দুই শ্রেণির জন্য আলাদা বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পড়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব শিক্ষার্থী আগামী বছর দশম শ্রেণিতে উঠে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বেছে নেবে। তাদের জন্য ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জন করে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে। এ কারণে এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানায় এনসিটিবি।