নতুন বছরের ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছায়নি পাঠ্যবই। তবে সরকারিভাষ্যে বলা হচ্ছে, সব বই পৌঁছে গেছে স্কুলে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো- স্কুলে সব বই নেই। কবে বই পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তাও মিলছে না। এ অবস্থায় বছরের শুরুতে সন্তানের জন্য একসেট বই কিনতে মরিয়া হয়ে উঠছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর বইয়ের বাজারখ্যাত বাংলাবাজার ও নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলোতে যে যেভাবে পারছেন পয়সা দিয়ে বই কিনছেন। গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর বেশ কিছু বইয়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ের এক ধরনের দাম, পুরনো শিক্ষাক্রমের বইগুলো একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য বই কেনার কথা বললে, দোকানি একটু যাচাই করে নিচ্ছেন ক্রেতাকে। ক্রেতা নামের ব্যক্তিটি যিনি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি সত্যি সত্যি ক্রেতা না সরকারি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার লোক তা যাচাই-বাছাই করার পর বুঝে শুনে গোপনে নতুন বই চড়া দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিন রাজধানীর বাংলাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে দশম পর্যন্ত সব ক্লাসের বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ক্লাস ভেদে প্রতিটি বই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রথম শ্রেণির নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের এক সেট বই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের একেকটি বই দেড়শ থেকে ২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বাংলাবাজারে একাধিক লাইব্রেরিতে নতুন বছরের বই আছে কিনা জানতে চাইলে বিক্রেতারা অস্বীকার করেন। তবে বাংলাবাজারের কলেজ লাইব্রেরির বই বিক্রেতা সোহেল বলেন, আমাদের কাছে নতুন কারিকুলাম ছাড়া অন্য সব বই আছে। নতুন কারিকুলামের বই অন্যান্য দোকানে খুঁজে দেখতে পারেন, পেলেও পেতে পারেন। তবে কিছু দিনের মধ্যে সব ক্লাসের বই দিতে পারবেন বলে তিনি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুটপাতের এক দোকানদার বলেন, আমাদের কাছে সরাসরি প্রেস থেকে বই আসে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি দামে বই কিনতে হচ্ছে। যার ফলে আমাদেরও বেশি দামে বই বিক্রি করতে হচ্ছে।
কোন প্রেস থেকে বই আসে জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। বাংলাবাজারে বই কিনতে আসা জাকারিয়া সরকার নামে এক অভিভাবক বলেন, মেয়ে বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল থেকে মাত্র ১টি বই দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে বই কিনতে হচ্ছে। ৮৫০ টাকা দিয়ে বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি ও ধর্ম বই কিনেছি। যা অন্য সময় ২৫০-৩০০ টাকায় কেনা যেত। বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন সরকার বলেন, স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শুধু চারটি এবং অষ্টম শ্রেণিতে মাত্র একটি বই এসেছে। বাকি শ্রেণির সব বই পাওয়া গেছে।
আরেক বইয়ের বাজার নীলক্ষেতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও রীতিমতো গলাকাটা দামে বিক্রি হচ্ছে বই। সপ্তম শ্রেণির এক সেট বই কিনতে কয়েকটি দোকানে ঘুরে বিভিন্ন দাম জানা যায়। জেনারেল লাইব্রেরিতে সপ্তম শ্রেণির প্রতি কপি বই বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়। সপ্তম শ্রেণিতে মোট বই ১৩টি। সেই হিসেবে এ লাইব্রেরিতে একসেট বই বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। আর সায়মা বুক হাউসে এক কপি বইয়ের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। তবে দরদাম করে প্রতি কপি বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকায়। অর্থাৎ এক সেট বই এ লাইব্রেরিতে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। বইয়ের দাম এত কেন জানতে চাইলে জেনারেল লাইব্রেরির একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, দামতো বেশি না। আমরা এই দামেই বিক্রি করি। এ প্রতিবেদকের সামনেই সপ্তম শ্রেণির ৩ কপি বই ১৮০ টাকা দিয়ে কেনেন এক অভিভাবক। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।