প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) দক্ষ শিক্ষক তৈরির মাধ্যমে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এসডিজি-৪ অর্থাৎ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে মানসম্মত শিক্ষকের বিকল্প নেই। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার অন্যতম স্টেকহোল্ডার হিসেবে পিটিআইগুলো বিগত কয়েক বছরে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এর প্রভাব পিটিআইয়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তা সংস্কারের চেষ্টা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষা সংস্কারের দাবি উঠেছে সর্বত্র। ইতোমধ্যে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশের পিটিআইগুলোকে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রয়োজনে মানসম্মত শিক্ষক তৈরিতে সক্ষম করে গড়ে তুলতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নিম্নোক্ত তথ্যাদি উপস্থাপন করছি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালায় নিয়োগ যোগ্যতায় শিক্ষা বিষয়ক ডিগ্রি/ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক নয়। ফলে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের প্রায় ৯৯ ভাগেরই শিক্ষা বিষয়ক ডিগ্রি/প্রশিক্ষণ থাকে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পাঠ পরিচালনার মতো একটি টেকনিক্যাল ও শিশু মনোবিজ্ঞানসম্মত কাজ সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য পেডাগজিক্যাল নলেজ ও পর্যাপ্ত অনুশীলন প্রয়োজন। এ বিষয়টি বিবেচনায় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরপরই সিইনএড/ডিপিএড নামে প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ প্রদান করা হতো, যার মাধ্যমে নবীন শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ অর্জনের মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পেতেন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে পিটিআইতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ও সুপ্রতিষ্ঠিত সিইনএড/ডিপিএড কোর্সের পরিবর্তে পাইলটিং হিসেবে ১৫টি পিটিআইতে এবং পরবর্তীতে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে ৬৭টি পিটিআইতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য মুখোমুখী ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ চালু করা হয়।
প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমানো হলেও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সিলেবাস/কোর্স কারিকুলাম কমানো হয়নি। এমনকি নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বল্প সময়ে ব্যাপক সিলেবাস সমাপ্ত করার ফলে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকেরা বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারছেন না। সময় স্বল্পতার কারণে একই সেশনে অনেক বিষয়বস্তু আলোচনা করতে হচ্ছে কিন্তু প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের শিক্ষা বিষয়ক ডিগ্রি না থাকায় এবং পূর্বে এ বিষয়ে ধারণা না থাকায় তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ প্রশিক্ষণে হাতে-কলমে অনুশীলনের সুযোগ খুবই কম হওয়ায় শিক্ষকেরা শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে দক্ষতা অর্জন না করেই প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করছেন। এ ছাড়া পরবর্তীতে নিজ উপজেলায় চার মাসের ইন্টার্নশিপ কার্যক্রমে যারা সুপারভিশনের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের অনেকের শিক্ষাবিষয়ক ডিগ্রি/প্রশিক্ষণ নেই এবং তারা অফিসিয়াল কাজে বেশি ব্যস্ত থাকায় প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় ফিডব্যাক দিতে পারছেন না। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দক্ষ, যোগ্য ও মানসম্মত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সব শিক্ষা কমিশন রিপোর্টেই শিক্ষক শিক্ষা/প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট, জাতীয় শিক্ষানীতি, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত হলো-
‘কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন-১৯৭৪’ এ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বলা আছে-পেশাগত প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনোভাবেই মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্ভব নয়। এখানেও প্রাইমারি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইনস্টিটিউটের কথা বলা হয়েছে এবং সেটাকে কলেজ হিসেবে গণ্য করা উচিত। এখানে এক বছরের পিটিআই কোর্সকে অপর্যাপ্ত আখ্যা দিয়ে দুই বছর করার কথা বলা হয়।
প্রফেসর এম শামসুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি-১৯৯৭ এর প্রতিবেদনের অধ্যায়-২২ এ প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক বছর মেয়াদি যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তা আগামীতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসারের চাহিদা পূরণের জন্য, বর্তমান শিক্ষক প্রশিক্ষণের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়।’ উক্ত কমিটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে-শিক্ষক প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষকদের পরিবর্তিত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা থাকা, প্রশিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ পিটিআইতে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ প্রচলিত এক বছর বহাল রাখা এবং প্রশিক্ষণকালে কমপক্ষে তিনমাস ব্যবহারিক পাঠদানের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার সুপারিশ করেন।
প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞার সভাপতিত্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন-২০০৩ এর প্রতিবেদনের নবম অধ্যায়ের ৯.৫ অনুচ্ছেদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে- ‘বিএড প্রশিক্ষণ আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সিইনএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। যেহেতু সম্প্রতি বিপুল সংখ্যক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসম্পন্ন শিক্ষকও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করছেন। আগামীতে এ ধরনের আরো শিক্ষক আসতে থাকবেন। উচ্চতর মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য বিএড প্রাইমারি প্রশিক্ষণ বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতায় তখন ধাপে ধাপে সাধারণ শিক্ষক থেকে সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারবেন। তার এ ক্যারিয়ার বিনির্মাণে বিএড (প্রাথমিক) প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
উক্ত শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণের সুপারিশে যা বলা হয়েছে- আগামী ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সিইনএড চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণ হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং পিটিআইগুলোতে কিছু সংখ্যক আসন বহিরাগত শিক্ষার্থীদের নিজ খরচে ভর্তির জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সিইনএড/বিএড (প্রাথমিক) প্রশিক্ষণকে চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সব পিটিআই-এ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করতে হবে। পিটিআই লাইব্রেরিগুলোতে প্রশিক্ষণ, শিশুবিকাশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে বইপত্র সরবরাহ করতে হবে। বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য বিষয়ভিত্তিক ৩টি অতিরিক্ত ইন্সট্রাক্টরের পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরের পিটিআইগুলোতে সিইনএড এর পাশাপাশি বিএড (প্রাথমিক শিক্ষা) প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে হবে যাতে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকেরা ও প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। পিটিআইগুলোর ইন্সট্রাক্টরদের প্রাথমিক শিক্ষাভিত্তিক বিএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সিইনএড শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়বস্তুর অনাবশ্যক ভার হ্রাস করে বেশি মাত্রায় প্রায়োগিক করা এবং অনুশীলনী পাঠদানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া কাম্য নয়। শিক্ষক-প্রশিক্ষণ কোর্সের পাঠ্যসূচিতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রণোদনামূলক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কিছু সুযোগ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। মাঠপর্যায়ের বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষকসহ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও সুযোগ-সুবিধা সরকারি পর্যায়ে ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাকরির পূর্বশর্ত হিসেবে বিএড (প্রাইমারি) বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে বিএড (প্রাইমারি) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষককে বিএড (প্রাইমারি) কোর্সে ডেপুটেশন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রমে প্রণোদনামূলক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষা প্রশিক্ষণের সমসাময়িককালে যেসব উন্নয়ন ঘটেছে তার সঙ্গে শিক্ষকদের পরিচিত করার লক্ষ্যে রেডিও/টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান চালু করা যেতে পারে।
দেশের সর্বশেষ শিক্ষানীতি ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’-এর ‘অধ্যায় ২৪: শিক্ষক প্রশিক্ষণ’ এর কৌশল-৪ এ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয়েছে-প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রম সিইনএড পরিবর্তন করে নতুন কার্যক্রম প্রবর্তন করা হবে। এ কার্যক্রমের মেয়াদ একবছর থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ মাস করা হবে। নতুন কার্যক্রমে শিখন-শেখানো ও মূল্যায়নের আধুনিক কলাকৌশল সংযোজন করা হবে। ইন্টার্নশিপ ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যবহারিক পাঠদানের মেয়াদ দুই পর্যায়ে কমপক্ষে নয় মাস করা হবে।’
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশ অনুযায়ী ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পাইলটিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু করে ইতিবাচক ফলাফল লাভ করায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ৬৭টি পিটিআইতে ১৮ মাসমেয়াদি ডিপিএড কোর্স চালু করা হয়।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ডিপিএড কোর্সটির কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সালমা আক্তারের নেতৃত্বে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে ডিপিএডের মেয়াদ না কমিয়ে কোর্সটির কার্যকারিতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদিত ডিপিএড কারিকুলাম রিভিউ রিপোর্টে কোর্সটিকে এক বছর করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ১৯তম বৈঠকে ডিপিএড কোর্সকে ৪/৬ মাস মেয়াদি করার সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিত রেখে বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। অধ্যাপক সালমা আক্তার তার গবেষণা নিবন্ধে ডিপিএডের মেয়াদ না কমিয়ে কার্যকারিতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমানের ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএডকে সমর্থন করে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করার পরামর্শ দেন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে কমপক্ষে এক বছর মেয়াদি কার্যক্রম সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মত দেন। তিনি পিটিআইকে কলেজ অব প্রাইমারি এডুকেশন নামকরণ করে প্রশিক্ষকদের পদবি প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, অধ্যক্ষ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপি কুমার দাস চলমান কোর্সের মেয়াদ কমানোর যৌক্তিক কারণ নেই বলে মতামত দেন। তিনি মেয়াদ এক বছর করার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু তাও রাখা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, এখন শিক্ষকেরা শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ছাড়াই শিক্ষকতায় প্রবেশ করছেন। সেখানে ১০ মাসের কোর্সে কীভাবে এই জ্ঞান দেয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড কোর্সটির শিক্ষাক্রম খুবই যুগোপযোগী। এটি সংকুচিত করলে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে।
সার্বিক দিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, উল্লিখিত জাতীয় শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট, জাতীয় শিক্ষানীতি, গবেষণা প্রতিবেদন, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত, পত্রপত্রিকায় উল্লেখিত প্রতিবেদনের কোথাও ডিপিএড প্রশিক্ষণকে সংকুচিত করার কথা বলা হয়নি বরং প্রশিক্ষণ কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদেরকে স্বল্পমেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিবর্তে মানসম্মত শিক্ষক শিক্ষা বিএড (প্রাইমারি) চালু করে উক্ত কোর্সকে কার্যকর করার জন্য নিম্নের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
১.পিটিআইকে ‘কলেজ অব প্রাইমারি এডুকেশন’ নামকরণ করা (কলেজ নামকরণের ফলে সরকারের কোনো ধরনের আর্থিক ব্যয় বাড়বে না)।
২. ইতোপূর্বে ডিপিএড কোর্স শেষে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের বেতন কমে যাওয়ায় ডিপিএড এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিলো। কোর্স শেষ করার পর পূর্বের সিইনএড কোর্সের ন্যায় উচ্চতর গ্রেড অথবা একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেয়ার সুযোগ রাখা যেতে পারে। এতে করে প্রশিক্ষণের প্রতি শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে।
৩. বিএড (প্রাইমারি) কার্যক্রমে অনলাইন, অফলাইন ও ব্লেন্ডেড মোডালিটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. পৃথিবীর অনেক দেশে শিক্ষক নিয়োগ যোগ্যতায় শিক্ষাবিষয়ক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক রয়েছে, প্রয়োজনে বাংলাদেশেও প্রি-সার্ভিস বিএড (প্রাইমারি) কোর্স চালু করা যেতে পারে। এতে কর্মরত শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে না। ফলে সরকারের ব্যয় কমবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ পিটিআই কর্মকর্তা সমিতির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা, সচিব ও মহাপরিচালক বরাবর তাদের মতামত দিয়েছেন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের স্বার্থে পিটিআইকে ‘কলেজ অব প্রাইমারি এডুকেশন’ নামকরণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এক বছর মেয়াদি বিএড (প্রাইমারি) প্রফেশনাল কোর্স চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অন্তবর্তিকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: শিক্ষাবিদ