পেনশন স্কিম প্রত্যাহারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আলটিমেটাম - দৈনিকশিক্ষা

পেনশন স্কিম প্রত্যাহারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আলটিমেটাম

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: গত ১৩ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষকদের জন্য প্রজ্ঞাপিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অসম্মানজনক উল্লেখ করে আগামী ২৫ মে’র মধ্যে প্রজ্ঞাপনটি পত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।  

তারা বলছেন, এমন পেনশন স্কিম বৈষম্যমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য যা কার্যকর হলে আগামী দিনে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসার আগ্রহ হারাবেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম পিছিয়ে পড়বে এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্র সংকুচিত হবে।

সোমবার (২০ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সুপারগ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের মোট ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। 

তারা বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিম বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। ২৫ মে এর মধ্যে এ বিষয়ে কোনো ধরনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ২৬ মে থেকে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকেরা একযোগে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। ২৮ মে সারা দেশে শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন। ৪ জুন শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। এ সময়ের মধ্যে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ওইদিনই বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, এই পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি গ্রুপকে ঠিক আলাদা করে দেওয়া হলো। এতে এক গ্রুপ রয়ে গেলেন আর আরেক গ্রুপকে সরিয়ে দেয়া হলো। এর ফলে শিক্ষকরা ৭৯ হাজার টাকা প্রতি মাসে পেনশন পাবেন। আর যারা আগের পেনশন স্কিমে রয়ে গেলেন তারা ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পাবেন কিন্তু একসঙ্গে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা পাবেন তারা।  

তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের জন্য সুপারগ্রেড নেই এটাই শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজনক। সুপারগ্রেড অধ্যাপকদের দেয়া যেতে পারে। অনেক নীতিমালা গঠন করা যেতে পারে। কিন্তুা এই পেশায় না থাকাটা অসম্মানজনক।

পেনশন স্কিমের অসুবিধে তুলে ধরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, এই ব্যবস্থা সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করবে, যা সংবিধানের সমতার নীতির পরিপন্থী। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন বাবদ কোনো অর্থ কাটা করা হয় না। 'প্রত্যয়' স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা ৫০০০ টাকা (যেটি সর্বনিম্ন) হারে টাকা কাটার বিধান রয়েছে। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বিদ্যমান পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে পেনশনারের মৃত্যু হলে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্তি হওয়া পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনের ওপর বৎসরিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় অর্জিত ছুটি নগদায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রস্তাবিত স্কিমে সে সুবিধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর। প্রত্যয় স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির করা হয়েছে ৬০ বছর। বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনের সাথে মাসিক চিকিৎসাভাতা, বছরে দুটি উৎসবভাতা ও একটি বৈশাখীভাতা প্রদান করা হয়। প্রস্তাবিত স্কিমে বিষয়টি উল্লেখ নেই।

মহাসচিব আরো বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে এ ধরনের প্রদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া স্বায়ত্বশাসনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। হঠাৎ করে একটি মহল নিজেদের সুবিধা অক্ষুণ্ন রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এ ধরনের একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, শিক্ষকরা একটা ধৈর্যের পরিচয় সব সময় দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষকরা বিশ্বের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় যথার্থ বেতন নিয়ে থেকে যেতে পারতেন না?  কিন্তু সেটি আমরা করিনি। কেনো করিনি? এই যে বলা হয় ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ নারী থেকে ৬ লাখ নির্যাতিত নারীর রক্তে ঘামে অর্জিত এই যে বাংলাদেশ। তাদের প্রতি আমাদের যে ঋণ তা আমরা শোধ করতে চাই। আমাদর মেধা আমাদের জ্ঞানকে এই বিশ্ববিদ্যালয় এই বাংলাদেশে প্রয়োগ করতে চাই। এখন এতে যদি কেউ বাঁধা দেয় সেটির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ আমরা করতে চাচ্ছি।           

তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের (বিশ্ববিদ্যালয়) স্বায়ত্বশাসন দিয়েছেন। আমাদের আত্মমর্যাদা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হলো শিক্ষা খাতের বিনিয়োগ। যেখানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে হয় সেখানে আজকে শুধু কর্তন আর অবনমন।

শিক্ষার্থীদের রাজাকার শ্লোগান লজ্জার: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের রাজাকার শ্লোগান লজ্জার: প্রধানমন্ত্রী কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত উপহার দিলেই এমপিওভুক্তি! - dainik shiksha উপহার দিলেই এমপিওভুক্তি! কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসির আরো ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী - dainik shiksha কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসির আরো ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাবির জরুরি বৈঠকে প্রভোস্ট কমিটির পাঁচ সিদ্ধান্ত - dainik shiksha ঢাবির জরুরি বৈঠকে প্রভোস্ট কমিটির পাঁচ সিদ্ধান্ত কোটার পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আজ - dainik shiksha কোটার পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আজ শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরছেন আজ - dainik shiksha শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরছেন আজ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040469169616699