ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এক পেশকারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ কাটাছেঁড়া করে দুই আসামিকে খালাস করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক বাদী। গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মোট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে বাদী মো. মফিজ উদ্দিন (৩২) এই অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত পেশকারের নাম রাকিব চৌধুরী। তিনি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নং-১৮-এ কর্মরত।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার নয়নপুর গ্রামের মৃত হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে মো. মফিজ উদ্দিন ঢাকার মোহাম্মাদপুর থানায় জনৈক জিয়া উদ্দিন শিমুল এবং আবু তাহেরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর নম্বর ২৫৯৭। জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, আসামি জিয়া উদ্দিন শিমুল ও আবু তাহের জোরপূর্বক তাকে আটক করে অলিখিত চেক ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন এবং ভয়ভীতি দেখান। এরপর জিডি তদন্তের পর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক দেবাশীষ মোদক আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন আসার পর মামলাটি মোহাম্মদপুর থানার নন এফআইআর মামলা (নম্বর ৩৬০/২০১৯) হিসেবে বিচারের জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১৮ নম্বর আদালতে আসে।
এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হওয়ার পর গত ১৮ অক্টোবর বাদীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু সেদিন আসামিদের আইনজীবী অসুস্থতা থাকায় সময় আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক মো. জসিম উদ্দিন গত ১৭ জানুয়ারি বাদীকে জেরা ও অপর সাক্ষীদের সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করেন। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি বাদী আদালতে না আসতে পারায় বিচারক সাক্ষী ক্লোজ করে ১ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির দিন ঠিক করেন। সে অনুযায়ী ১ মার্চ গতকাল বুধবার বাদী আদালতে গিয়ে দেখতে পান মামলাটি কজলিস্টে থাকলেও নথি নেই।
পরে মামলার আইনজীবী আজাদ রহমান বিচারককে বিষয়টি জানালে বিচারকের নির্দেশের পর কর্মচারীরা নথি বের করেন। এরপর বিচারক মো. জসিম নথি দেখে জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় হয়ে গেছে। রায়ে আসামিরা খালাস পেয়েছেন। এরপর আইনজীবী নথিতে দেখতে পান, গত ১৭ জানুয়ারি তারিখের আদেশে ১ মার্চ লেখার স্থানে কাটাছেঁড়া করে ১২ ফেব্রুয়ারি লেখা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি বাদীপক্ষের অজ্ঞাতে আত্মপক্ষ শুনানি হয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানির পর ২৬ ফেব্রুয়ারি আসামিদের খালাসের রায় ঘোষিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।এ ব্যাপারে বাদী মফিজ উদ্দিন জানান, ‘আমার ধারণা আদালতের পেশকার রাকিব চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারিখ কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে পরিবর্তন করে আসামিদের খালাস করিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, এ ব্যাপারে বাদী বিজ্ঞ সিএমএম মহোদয়ের কাছে বুধবার (গতকাল) লিখিত অভিযোগ করেছেন। পেশকার রাকিব চৌধুরী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার আদালতের ওমেদার এ কাজ করতে পারেন।’