‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’ কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করার প্রস্তাব দিয়েছেন একজন জেলা প্রশাসক। এ প্রস্তাব আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন ষষ্ঠ অধিবেশনে আলোচনা হবে। জননিরাপত্তা বিভাগ সম্পর্কিত বিষয়ে এমন প্রস্তাব এসেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী জেলা প্রশাসক এই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তার প্রস্তাবে প্রথম যুক্তি হচ্ছে- ‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’-এর ধারা ৩-এ বলা হয়েছে যে কোনো ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানকে জুয়ার স্থান হিসেবে গণ্য করা হলেও যুগের পরিবর্তনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ও ডিভাইসের মাধ্যমে জুয়া খেলা হলেও তা আইনের আওতাভুক্ত না হওয়ায় শাস্তি প্রদান করা সম্ভব না হওয়া।
দ্বিতীয়ত, ‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’-এর ধারা ৩-এ সর্বোচ্চ শাস্তি তিন মাস কারাদ- অথবা ২০০ (দুইশ) টাকা অর্থদ-, ধারা-৪ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি এক মাস কারাদ- অথবা ১০০ (একশ) টাকা অর্থদ- এবং ধারা-১১ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি এক মাস কারাদ-সহ ৫০ টাকা অর্থদ- করার বিধান রয়েছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া।
জেলা প্রশাসকের সুপারিশ- ক) ‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’-এর ধারা-৩ সংশোধন করে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মকে জুয়ার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
খ) ‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’-এর বিভিন্ন ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর কারাদ-সহ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- প্রদানের বিধান রাখা যেতে পারে।
এই জেলা প্রশাসক আরেকটি আইন যুগোপযোগী করার প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রথমত, ‘টাউট আইন, ১৮৭৯’-এর ধারা-৩৬ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট, জেলা জজ, দায়রা জজ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলার কালেক্টরের নিচে নয় এমন রাজস্ব কর্মকর্তাকে টাউটদের তালিকা প্রণয়ন করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে জেলার অন্যান্য সরকারি দপ্তরেও টাউট/দালালদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ‘টাউট আইন, ১৮৭৯’-এর ধারা ৬ অনুযাযী সর্বোচ্চ শাস্তি তিন মাস কারাদ- অথবা ৫০০ টাকা অর্থদ- প্রদানের বিধান। উল্লিখিত কারাদ- ও অর্থদ- অপর্যাপ্ত।
উত্তরণের সুপারিশ হচ্ছে- এই আইনের ৩৬ ধারায় অন্যান্য দপ্তরের টাউট/দালালদের প্রকাশ্য তালিকা প্রণয়ন ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের বিধান রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসসহ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান রাখা যেতে পারে।
সম্মেলনের তৃতীয় দিন আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের পৃথক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বিকালে তারা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নিদের্শনা গ্রহণ করবেন। রাত ৮টায় ফের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধিবেশনে অংশ নেবেন। অধিবেশন শেষে রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য এবং নৈশভোজ হয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে।