এক প্রকৌশলীকে ঠিকাদারদের মারধরের ঘটনায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে ‘অস্থিরতা’ বিরাজ করছে। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। ঠিকাদাররা বলছেন, এখানে প্রতি টেন্ডারেই ‘কমিশন’ গুনতে হয়। আর প্রকৌশলীরা বলছেন, ঠিকাদাররা দরপত্রের পরিবর্তে কাজ ‘ভাগাভাগি’ করতে চায়।
ঠিকাদারের কাছে ‘ঘুষ’ দাবি এবং প্রকৌশলীর কাছে ‘পুনঃদরপত্র’ আহ্বানের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ৬ আগস্ট ইইডির ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটে।
ওইদিন মনিরুজ্জামান নামের এক উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিজ দপ্তরেই মারধর করেন স্থায়ী কয়েকজন ঠিকাদার। এরপর ইইডির ঠিকাদার সমিতি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির নেতারা ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটু সমস্যা হয়েছিল; সমাধান হয়ে গেছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ দেয়ার জন্য পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে আগেই ‘টেন্ডার আইডি’ দিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদারদের। তারা বলছেন, প্রকৌশলীরা পছন্দের ব্যক্তিদের কাজ দিতে ‘টেন্ডার আইডি’ দিয়ে দিচ্ছেন। প্রাক্কলিত মূল্যসহ টেন্ডারের সব তথ্য সংবলিত আইডি কোন ঠিকাদারকে দিয়ে দেয়া ‘অপরাধ’। দরপত্র উন্মুক্ত করার আগে এই আইডি কাউকে দেয়া হলে ওই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
জানা গেছে, প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকার ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাব্বির হোসেন মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক তারিক হাসান কাজলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদারদের দায়ী করেন নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত। তিনি জানান, হামলার ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানায় জিডি করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়েও জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা তারিক হাসান কাজল বলেন, তিনি ইইডির ঠিকাদারির কাজ করেন না। তাকে জড়িয়ে ‘অপপ্রচার’ চালানো ও থানায় জিডি করার কোন অন্য ‘উদ্দেশ্য’ থাকতে পারে।
কাজ না করলে ইইডি অফিসে গিয়েছিলেন কেন- জানতে চাইলে তারিক হাসান কাজল বলেন, ছাত্র ও যুব নেতাদের সহযোগিতা করতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তার দাবি, তারা নিয়ম মেনে এলাকার ‘ছোট ভাইদের’ কাউকে কাজ পাইয়ে দেয়ার করছেন। সেজন্য সেখানে গিয়েছিলেন। তারা সেখানে গিয়ে জানতে পান, ‘কাজতো দেয়নি
বরং সে (নির্বাহী প্রকৌশলী) পছন্দের ঠিকাদারদের টেন্ডার আইডি দিয়ে দিছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড করা ‘বেআইনি’। পছন্দের ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের আইডি দিলে অন্য কেউতো কাজ পাবে না বলে দাবি করেন তারিক হাসান কাজল। তার অভিযোগ, প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান পছন্দের ঠিকাদারকে আগাম আইডি দিয়েছিলেন। পরে মনিরুজ্জামান ও নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের কাছে দাবি করেন, প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশেই দু’একজন ঠিকাদারকে আগাম আইডি দেয়া হয়।নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে আইডি দেয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছেন কী না এমন অভিযোগের বিষয় প্রধান প্রকৌশলী দোলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেছেন, এটা ভুয়া। তিনি এ ধরনের কোন নির্দেশ কোন প্রকৌশলীকে দেননি বলে জানান। তাছাড়া ওই সময় তিনি ‘ওমরাহ’ পালনের জন্য সৌদি আরবে ছিলেন।
প্রধান প্রকৌশলী এ ধরনের কাজ কখনো করেন না জানিয়ে বলেন, ‘ওটা তার (নির্বাহী প্রকৌশলী) অফিস। সেই চালাবে। আমি কেন বলব। আমার অবর্তমানে কেউ যদি আমার কথা বলে তবে তার দায় অবশ্যই তার। বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে।’