হবিগঞ্জের মাধবপুরের যোগেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরির জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না মাসুমা আক্তার নামে হতদরিদ্র এক নারী। অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের (ম্যানেজিং কমিটি) সভাপতিকে ২ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় আয়া পদে তাকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির অন্তত ছয়জন সদস্য। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন।
জানা গেছে, যোগেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাম নৈশপ্রহরী ও আয়ার শূন্যপদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় গত বছর ২৯ ডিসেম্বর। পরে গত ২ এপ্রিল ওই পদগুলোতে নিয়োগপ্রত্যাশীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। ওইদিনই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে আয়া পদে চার প্রার্থীর মধ্যে মাসুমা প্রথম হন। পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ড সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত মাসুমাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। পরে সেদিনই সন্ধ্যার পর প্রধান শিক্ষক নুরুল্লাহ ভুঞা মাসুমার মোবাইল ফোনে কল করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মাসুমা তার বৃদ্ধ বাবা তাজুল ইসলামকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাসায় যান। সেখানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাছির উদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়োগপত্র পেতে হলে ২ লাখ টাকা দাবি করেন মাসুমার কাছে। কিন্তু নিজের দারিদ্র্যের কথা জানিয়ে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এরপর গত ৬ এপ্রিল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে মাসুমাকে নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। তখন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা কারণ জানতে চাইলে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি।
ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য সৈয়দ শামসুল আরেফিন রাজিব সাংবাদিকদের জানান, ওইদিন সভায় উপস্থিত ম্যানেজিং কমিটির ছয়জন সদস্য বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী মাসুমা আক্তার বলেন, ‘২ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে (প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি) আমার নিয়োগ বাতিল করা হবে বলে তারা সাফ জানিয়ে দেন। আমি গরিব ঘরের মেয়ে, তাই এত টাকা দিতে পারব না জানিয়ে অনেক আকুতি মিনতি করলেও তাদের মন গলেনি।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গতকাল বুধবার প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মোবাইল ফোনে কল করা হলে তারা দুজনই ব্যস্ত আছেন উল্লেখ করে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঘণ্টা দুয়েক পর তাদের একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আহসান বলেন, ‘মঙ্গলবার অভিযোগটি পেয়েছি। ওইদিনই তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তদন্তের জন্য কতদিন সময় দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পেয়ে যাব।’
প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেছেন, ‘আমি নিজেও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলাম। আমরা তো মাসুমা আক্তারকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলাম। তারপরও কেন তার নিয়োগ হলো না তা বোধগম্য নয়। এ ছাড়া আরেকটি পদেও পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব।’
যোগেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে এর আগে অবিলিকৃত সরকারি বই বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।