রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার অর্থনীতি বিষয়ে পড়া ১৫ পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র এসেছিল পৌরনীতির। প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রবেশপত্র সংশোধন করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় মঙ্গলবার (১৬ মে) অনুষ্ঠিত পৌরনীতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি এসব পরীক্ষার্থী। কিন্তু আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মে) অর্থনীতি পরীক্ষার দিন ধার্য রয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংশোধিত প্রবেশপত্র হাতে পায়নি তারা।
নবম শ্রেণীতে ভুলক্রমে পৌরনীতি বিষয়ে রেজিস্ট্রেশন করার দুই বছর পার হলেও বিষয়টি সংশোধন হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীরা উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের সাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পৌরনীতি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকে এবং অর্থনীতি পরীক্ষার সংশোধিত প্রবেশপত্র হাতে না পেয়ে পরবর্তী শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করছে ওই পরীক্ষার্থীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার ২০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে তিনজন বিজ্ঞান বিভাগের। মানবিক বিভাগের ১৭ জনের মধ্যে দুজনের অর্থনীতি বিষয়ের প্রবেশপত্র এসেছে। বাকি ১৫ জনের পৌরনীতি বিষয়ের প্রবেশপত্র এসেছে। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানে কখনই পৌরনীতি বিষয় পড়ানো হয় না। নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সময় ভুলক্রমে পৌরনীতি বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা। পরে ভুলটি প্রকাশ পেলে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি সংশোধনের আশ্বাস দেন। ভুল সংশোধনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম এক হাজার টাকা করে নেন। কিন্তু গত দুই বছরেও ভুলটি সংশোধন হয়নি।
এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে ১৫ জন পরীক্ষার্থী দেখে তাদের প্রবেশপত্রে যথারীতি পৌরনীতি বিষয় এসেছে। এ নিয়ে তারা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে চার-পাঁচ দিন গেলেও তার দেখা পায়নি। অবশেষে ফোনে বিষয়টি তাঁকে জানালে অর্থনীতি পরীক্ষার আগেই প্রবেশপত্র সংশোধন হবে জানিয়ে অফিস সহকারী আরিফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। তখন আরিফুল আরও ৫৫৮ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছে দাবি করেন। প্রধান শিক্ষকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্রে উল্লেখিত পৌরনীতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। এদিকে অর্থনীতি পরীক্ষার আগের দিনও সংশোধিত প্রবেশপত্র হাতে না পাওয়ায় তাঁদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিতায় পড়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলে, ‘প্রধান শিক্ষককে আমরা কখনও স্কুলে পাই না। তাকে ফোনে বার বার কান্না করে অনুরোধ করলে অফিস সহকারী আরিফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আরিফুল টাকা ছাড়া কোনো কথা শোনে না। আমরা টাকা পরিশোধ করেও প্রবেশপত্র সংশোধন পাইনি। কালকে পরীক্ষা কোনো উপায় না পেয়ে আজ উপজেলায় এসেছি অভিযোগ জানাতে। নয়তো আমরা শিক্ষাজীবনে এক বছর পিছিয়ে যাব।’
পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক বাবর হোসেন সপ্তাহে দুই-একদিন স্কুলে আসেন। মূলত অফিস সহকারী আরিফুল প্রধান শিক্ষকের কাজগুলো সারেন। তাদের অবহেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন করার সময় নিজেরা দেখে ফরম পূরণ করেনি এটা তাদের গাফিলতি। আমরা এ ব্যাপারে কাউকে জবাব দিতে বাধ্য নই। আরও কিছু জানার থাকলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
সাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর হোসেনের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর সংযোগটি কেটে মুঠোফোন বন্ধ করে দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. রাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ জন পরীক্ষার্থীর অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আজকের মধ্যে প্রবেশপত্র সংশোধন করে তাদের অর্থনীতি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে মর্মে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।’
ইউএনও মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কোনো গাফলতি থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’