পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া গোবিন্দগুরু তফশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় চাকরি প্রার্থীসহ স্থানীয় লোকজন সাকোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জাকির হোসেন এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার রায়কে স্কুল কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে ডিজির প্রতিনিধি মো. নুরুল ইসলাম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন শান্ত হয় এবং তালাবদ্ধ অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পান।
জানা যায়, গোবিন্দগুরু তফশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে নিয়োগ কমিটি। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার বিরুদ্ধে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার রায় ও সভাপতি মো. জাকির হোসেনকে স্কুল কক্ষে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রেখে স্কুলের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। তাদের অভিযোগ, স্কুলের জমি দাতা সদস্যদের নিয়োগ না দিয়ে বাইরের লোকের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে সভাপতি ও কর্মচারী নিয়োগ কমিটি। জানা গেছে, গোবিন্দগুরু তফশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব সহকারী ১ জন, নৈশপ্রহরী ১ জন , পরিছন্নতাকর্মী ১ জন ও আয়া ১ জনসহ মোট ৪টি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ৩১ জন আবেদন করেন। সে অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ডিজির প্রতিনিধিসহ পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ কমিটি গঠন করে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
এদিকে এ নিয়োগের আগে অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বরে ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে কমিটির নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিতের আদালতে অভিযোগ করেন একই এলাকার ভূপাল চন্দ্র রায়। এতে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ ৯ জনকে বিবাদী করা হয়।
স্কুলের জমিদাতার পুত্রবধূ দাবি করেন সাবেক ইউপি সদস্য সোনা রানী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সামনেই অর্থ লেনদেনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৪টি পদে নিয়োগের নামে প্রতিটি পদে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাকোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন, অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের নিয়োগের প্রক্রিয়া করছেন।
এদিকে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে সভাপতি পদ ছেড়ে দেবো। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার রায় বলেন, ৪টি পদের বিপরীতে ৩১ জন আবেদন করেছে। নিয়োগ পরীক্ষার জন্য কিছু অর্থ সভাপতি নিয়েছেন তবে অতটা নয় যতটা বলা হচ্ছে।
এদিকে নিয়োগ কমিটিতে নিযুক্ত ডিজির প্রতিনিধি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নিতেই এসেছিলাম। তবে, যেহেতু পরীক্ষা গ্রহণের অনুকূল পরিবেশ ছিল না, সেজন্য নিয়োগ পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারভিন আক্তার বানুকে একাধিকবার কল ও এসএমএস করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে পরে পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসার শাহিন আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। নিয়োগে দুর্নীতি করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।