কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঐহিত্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জোয়ারিয়ানালা হাজী মোহাম্মদ সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক সিকদারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায়, সেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোসহ নানা অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে।
এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তার পদত্যাগের দাবিতে রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক সিকদার ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে। ইতিপূর্বে পরপর ৩টি ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে এ প্রধান শিক্ষকের আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আত্মসাৎকৃত ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা বিদ্যালয়ে তহবিলে ফেরত দিতে বাধ্য হন। ওই সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগের দাবি তুললে প্রধান শিক্ষক সবার কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়মের পুনারাবৃত্তি ঘটবে না বলে মৌখিক অঙ্গীকার করেন।
তারা আরও জানান, পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক কৌশল পরিবর্তন করে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষকসহ সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিনা রশিদে অর্থ আদায়, ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাত, কোচিং বাণিজ্য, উপবৃত্তির শিক্ষার্থী নির্বাচনে অনিয়ম,সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকলে ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক সিকদারের পদত্যাগসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিলো।
কিন্তু তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক নির্বিঘ্নে নিজের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন- প্রধান শিক্ষক কখনো শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতেন না। এমনকি এসব অনিয়ম নিয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে হুমকি-ধমকি ও নানাভাবে হয়রানি করা হতো।
এছাড়াও আজিজুল হক সিকদার যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। উপজেলা পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে থাকা এ বিদ্যালয়টি বিগত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলা পর্যায়ে ১৭ নাম্বারে নেমে আসে। এমনকি পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি।
সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আমলে নিয়ে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এসব কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং জোয়ারিয়ানালার সর্বস্তরের জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। তবে ওইদিন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাননি।
সমাবেশে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ছাড়াও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রকৌশলী মীর কাশেম, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল মজিদ বক্তব্য রাখেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জোয়ারিয়ানালা হাজী মোহাম্মদ সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক সিকদার জানান- অযৌক্তিক কারণে তিনি পদত্যাগ করবেন না। অডিট করে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হলে তিনি যেকোনো শাস্তি মেনে নেবেন।
তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ব্যক্তি আক্রোশে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। এ কারণে তিনি ৭দিনের ছুটি নিয়েছেন।