মানিকগঞ্জের ঘিওর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী খানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ সহ শিক্ষকদের হয়রানি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই অভিযোগ করেছেন।
তাছাড়া প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম, আতিকুজ্জামান ও খায়রুন নাহার খন্দকার স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে জানা গেছে, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। ১২ বছর ধরে মালামাল ক্রয় না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ নিয়োগ প্রার্থীদের নিয়োগপত্র আটকিয়ে উন্নয়নের কথা বলে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও প্রশাংসা পত্র বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২ বছরে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ৮ বছরে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কুল বেতনের ২০% প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তন করে ব্যাংকে জমা না করে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ১২০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া সমপ্রতি বৈজ্ঞানিক মালামাল ক্রয় না করে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদ্যালয়ের জমি লিজ প্রদানেও অনিয়ম রয়েছে।
বিদ্যালয়ে দোকানের জামানত আত্মসাৎ ও দোকানের ভাড়া আদায়ে অনিয়ম করেছেন। বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ, চার্জার ফ্যান, সিসি টিভি প্রধান শিক্ষক নিজ বাসায় ব্যবহার ও বিদ্যালয়ের টাকায় নিজের জন্য একাধিক মোবাইল সেট ক্রয় করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা ও হয়রানি করা এবং শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে টাকা আদায় ও ক্লাস চলাকালীন সময় ছাত্রীদের জোর করে প্রাইভেট পড়ানোসহ রাতের বেলায় বহিরাগতদের নিয়ে আড্ডা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী খানের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী শিক্ষক প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়া ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক ছাড়া সকলেই স্বাক্ষর করেছেন ওই অভিযোগ পত্রে। এ ছাড়া প্রায় তিনশ’ ছাত্রী গণস্বাক্ষর করেছেন প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবগুলো সত্য ও প্রমাণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী খান জানান, যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে- তারা অভিযোগ তুলে নিবেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন- তাকে হয়রানি করার জন্যই একটি গোষ্ঠী মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ঘিওর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে মিটিং করে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।