ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া শাহপীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই ১৯ বছর ধরে। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য ১২ বছর ধরে। হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। শুধু এ দুটি নয় উপজেলার অন্তত ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চললেও এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের তেমন তোড়জোড় নেই। ফলে এসব বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ‘দুর্বল’ ব্যবস্থাপনা আর কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অসহযোগিতার কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ব্যহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলায় ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং কয়েকটি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে শাহপীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক এবং ১২ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।
খড়মপুর গ্রামের বাসিন্দা সৌরভ খাদেম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা খারাপ। কিছু সংখ্যক শিক্ষকের কারণে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে।
দূর্গাপুর গ্রামের সফিউল স্বপন নামে এক অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মান সম্মত লেখাপড়ার কথা চিন্তুা করে শিক্ষকের ঘাটতি পুরণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া উচিত।
তুলাই শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাত হোসেন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির দায়ের করা মামলার কারণে ২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বর্তমানে নতুন সভাপতি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে। বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাদ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, একজন পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষকের যে মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা থাকে সাধারণ শিক্ষকের তা থাকে না। তবু আমরা আমাদের যোগ্যতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করছি।
জানতে চাইলে কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রায় ১৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য এবং ১২ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। আমার জানামতে ৩ বার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্ত নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।
আখাউড়া উপজেলার সদ্য সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শওকত আকবর খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার দায়িত্বকালে খড়মপুর স্কুলে ২ বার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নিয়োগ কার্যক্রম ব্যহত হয়। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সঠিকভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করতে পারে না। এতে পড়ালেখার মান নষ্ট হয়। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হলে অনতিবিলম্বে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
জানতে চাইলে উপজেলায় সদ্যযোগদান করা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি। তারা যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া না করে আমরা কেবল তাদেরকে অনুরোধ করতে পারি। আমি এ উপজেলা নতুন যোগদান করেছি। আমি চেষ্টা করবো প্রত্যেকটি স্কুল যাতে শূন্য পদ পূরণ করে। কারণ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে সাময়িক কাজ চালানো যায়। বছরের পর বছর চালানো যায় না। একজন প্রধান শিক্ষক যেরকম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান তা করতে পারে না। এতে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। তার সহকর্মীরাও অনেক ক্ষেত্রে তার আদেশ পালন করতে চান না।