প্রবীণ ও অবসরপ্রাপ্তদের কষ্ট লাঘব হোক - দৈনিকশিক্ষা

প্রবীণ ও অবসরপ্রাপ্তদের কষ্ট লাঘব হোক

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ৮০ বছরের বেশি বয়সকে বার্ধক্য ধরা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ৬০ বছরের অধিক সময়কে বার্ধক্য বলে গণ্য করা হয়। সরকারি হিসাব মোতাবেক ১ কোটি ৫০ লাখের অধিক প্রবীণ রয়েছেন। যার সংখ্যা প্রতিবছর ৩০ লাখ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবীণদের মধ্যে কিছু কর্মক্ষম রয়েছেন, আমাদের দেশে তাদের তেমন কাজ করার সুযোগ দৃশ্যমান নয়।  সুযোগ না থাকার ফলে তারা কর্মহীন থাকতে থাকতে নানা প্রকার চিন্তা ভাবনা, একাকীত্ব, মানসিক অশান্তিতে রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বার্ধক্যকালে শারীরিক দুর্বলতা ও রোগ ব্যাধি মারাত্মকভাবে ক্লান্ত করে ফেলে। যার ফলে একাকী চলাফেরা বা কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে স্বামী বা স্ত্রী তাদের একাকীত্ব জীবন যাপনের কষ্ট একমাত্র তারাই এর মর্মস্পর্শী বেদনা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারেন। সুস্থ দেহ মন নিয়েও একাকীত্ব মানুষকে অচল করে ফেলে ফলে, তাদের দেখভাল করার জন্য পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সহযোগিতা আবশ্যক।

বেশিরভাগ বার্ধক্যের পক্ষে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে উপার্জনহীন করা ছেড়ে তাদের বেকারত্বের জীবন যাপন করতে হয়। উপার্জনের ব্যক্তির পরিবার তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বার্ধক্যের ফলে দেহের মধ্যে জন্মায় নানা রোগ। লোপ পায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরের শক্তি। অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অভাবের তাড়নায় সক্ষমতার বাইরে কাজ করতে বাধ্য হন। এ বয়সে কেউ কেউ পরিবার থেকে অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন। চিকিৎসার অভাবে অসুস্থ জীবন যাপন করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সরকার থেকে প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা খুবই কম। তাই এতে প্রবীণদের সুরক্ষা হচ্ছে না। প্রবীণদের জন্য নেই কোনো আলাদা হাসপাতাল। অসহায় দরিদ্র প্রবীণরা চিকিৎসাসহ সকল ওষুধ বিনামূল্যে প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই। প্রবীণের প্রতি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ব ও নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করা প্রয়োজন। সরকারি কর্মচারীদের বর্তমান চিকিৎসা ভাতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আশা করা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার মোতাবেক, আগামী বেতন স্কেলে যথার্থ চিকিৎসা ভাতা প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা যৌক্তিকতা বিশেষভাবে বিবেচনা করার দাবি রাখে। সরকারি প্রবীণ অবসরপ্রাপ্তরা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল স্বাধিকার আন্দোলনের গর্বিত সৈনিক। আজকের যে স্বাধীন সার্বভোম উন্নয়নের মহাসড়কের বাংলাদেশ, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম রক্তে গড়ে তোলা। এই মহান সৈনিকদের যথার্থ মূল্যায়ন প্রত্যাশা। প্রবীনদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ১০টি স্কেলে বেতন নির্ধারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বরণের পর পরবর্তী সরকারগুলো ১০টি স্কেলের পরিবর্তে ২০টি করে কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করেছেন। আগামী দিনে বেতন স্কেল পুনরায় ১০টি স্কেলে এনে বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি। বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে একদিকে চলেছে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অপরদিকে ডলার সংকট। এ অসহনীয় অবস্থায় শেখ হাসিনা সরকার সর্বস্তরের জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সরকার সাধারণ মানুষের নিত্যপণ্যের মালামাল টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। অপরদিকে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ নানা রকমের উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছেন। এ বিশাল উদ্যোগের পরও মহাসংকটে জীবন কাটাচ্ছে সিনিয়র পেনশনভোগীরা। তাদের সংকট উত্তরণে কতিপয় পরামর্শ দেয়া হলো।  

শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের করুণ হৃদয় বিদারক অবস্থা। যেহেতু বেশিরভাগ শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা মাসিক ভাতা পাচ্ছেন না। সেহেতু ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকার ঘোষিত ৫ শতাংশ প্রণোদনাও পাবেন না। তাদের ক্ষেত্রে উৎসব ভাতা ছাড়া স্বপ্ন দেখার প্রশ্নই আসে না। সরকার শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের ১৫ বছর পর পেনশন পুনঃস্থাপনের এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এতে খুবই নগন্য সংখ্যক পেনশনভোগী ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থেকে পেনশনের সুবিধাসহ ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাদের শতভাগ পেনশনের ৫০ ভাগ অর্থ ৮ বছরের মধ্যে যথারীতি মাসিক ভাতা গ্রহণ না করে পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় আছেন শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা। তাদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার শতভাগ পেনশন সমর্পন বন্ধ করে দিয়েছেন বিধায় বর্তমানে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং মৃত্যুজনিত কারণে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। তাদের স্বস্তিতে বেঁচে থাকার জন্য ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর পেনশন পুনঃস্থাপনের বিষয়টি সুবিবেচনার আশা রইলো।

প্রবীণ পেনশনভোগীদের চিকিৎসা ভাতাও একটি বড় বিষয়। নবীনদের তুলনায় প্রবীণরা বার্ধক্যজনিত কারণে রোগে-শোকে জর্জরিত। স্বাভাবিকভাবে তাদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ করে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ওষুধসহ চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধি যৌক্তিকতা অবশ্যই বিবেচনাযোগ্য। 

এক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। ৬৫ বছরের নিচে ৫০০০ টাকা। ৬৫ বছর থেকে ৭০ বছরে ৭,৫০০ টাকা। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে ১০,০০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেয়া যেতে পারে। 

একই পদে পেনশনের বিশাল বৈষম্যও একটি সমস্যা। বঙ্গবন্ধু আজীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারই আদর্শে অবিচল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বৈষম্য দূর করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মরত থাকাকালীন লক্ষ্য করেছি, জুনিয়ররা সিনিয়রদের চেয়ে কম বেতন পেয়ে থাকেন। অথচ পেনশনের ক্ষেত্রে জুনিয়র পেনশনভোগীরা সিনিয়রদের চেয়ে ভাতা বেশি পান। পেনশনভোগীদের ওই বৈষম্য অনেকটা গীতিকবি হাছন রাজার গানের মতো।  ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে’। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে আয়ু কমে কিন্তু সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক দায়ভার কমে না। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা ছিলো খুবই কম। তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনধারণ ছিলো অতি কষ্টের। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর এ কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়েছে। ওই সময় তাদের বেতন স্কেল দ্বিগুণ বৃদ্ধি হওয়ায় বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এ বৈষম্য স্বাভাবিক নিয়মনীতির পরিপন্থি। এ আমানবিক বৈষম্য দূর করা জরুরি। 

সিনিয়র পেনশনভোগীরা রোগে-শোকে আর্থিক অসচ্ছল থাকলেও সমাজে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদার অধিকারী। জীবনের দীর্ঘসময় দেশ ও জাতির সেবা করে আজ তারা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক দৈন্যতায় পর্যদুস্ত। সিনিয়র পেনশনভোগীরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশীদার। তাদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে হাসপাতাল, যানবাহনসহ সকল ক্ষেত্রে আলাদা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আজও যুবক-যুবতী সবার সঙ্গে প্রবীণদের একই লাইনে হুমড়ি খেয়ে অবস্থান করতে হয়। 

প্রবীণদের বয়সের ভারে অসহায় বিবেচনা করে, তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেয়া প্রয়োজন। তাদের দেশ ও জাতির প্রতি ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে যৌক্তিক সমস্যা দূরীকরণ প্রত্যাশা রইলো। স্বস্তিতে ও সুখে থাকুক সকল প্রবীণ ও সিনিয়র পেনশনভোগীরা। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। 

লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010276079177856