শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ফলে সৃষ্ট এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং উদ্ভাবন-নির্ভর সমাজ বিনির্মাণে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের আমন্ত্রণে গ্রোথ সামিট-২০২৩ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণকালে তিনি এসব কথা বলেন বলে রোববার (৭ মে) মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ রূপকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষ হবে, প্রযুক্তির মাধ্যমে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধিত হবে, সরকার প্রযুক্তিগতভাবে স্মার্ট হবে এবং সমাজের সকল স্তরে এর প্রতিফলন হবে।
তিনি প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রণয়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে অভিহিত করে, শিক্ষা ব্যবস্থার সবস্তরে প্রযুক্তির প্রসারে সরকার কর্তৃক প্রণীত ন্যাশনাল মাস্টারপ্ল্যান ফর আইসিটি ইন এডুকেশন, ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড অ্যান্ড এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল মাস্টার প্ল্যান প্রভৃতির ওপর আলোকপাত করেন।
শিক্ষামন্ত্রী গত ২-৩ মে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের ডায়ালগসমূহে অংশ নেন। এ সময় তিনি, ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে মর্মে মন্তব্য করে, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান- এই ত্রয়ীর মধ্যে নিবিড় সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শিক্ষাজীবনে অর্জিত জ্ঞান যাতে কর্মক্ষেত্রে অনুপযোগী হয়ে না যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষণ ও দক্ষতার উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার সুস্পষ্ট রূপরেখা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান জানান।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকালে শিক্ষামন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারপারসন প্রফেসর ক্লাউস শোয়্যাব এবং ফোরামের বর্তমান সভাপতি বর্গ ব্রেন্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের বৈশ্বিক আলোচনা এবং এসব বৈচিত্র্যময় চিন্তাভাবনাকে একটি কমন প্লাটফর্মে উপস্থাপনের প্রয়াসের জন্য তাঁদের প্রশংসা করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কোভিড-১৯ এর কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং সময়ে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রচেষ্টা তাদের সামনে তুলে ধরেন। নানাবিধ ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ শ্রমবাজারের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, সে বিষয়ে নিবিড় ও বিস্তারিত গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামকে অনুরোধ জানান।
বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীবৃন্দ, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিশ্বের নামকরা করপোরেট সংস্থাসমূহের প্রধান নির্বাহীসহ প্রমুখ ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশ নেন।